Page

Choose Your Language

Tuesday, June 28, 2016

আজব সাজা-সুকুমার রায়।


আজব সাজা
সুকুমার রায়


"পণ্ডিতমশাই, ভোলা আমায় ভ্যাংচাচ্ছে।" "না পণ্ডিতমশাই, আমি কান চুলকাচ্ছিলাম, তাই মুখ বাঁকা দেখাচ্ছিল !" পণ্ডিতমশাই চোখ না খুলিয়াই অত্যন্ত নিশ্চিন্ত ভাবে বলিলেন, "আঃ ! কেবল বাঁদরামি ! দাঁড়িয়ে থাক।" আধমিনিট পর্যন্ত সব চুপচাপ। তারপর আবার শোনা গেল, "দাঁড়াচ্ছিস না যে ?" "আমি দাঁড়াব কেন ?" "তোকেই তো দাঁড়াতে হবে।" "যাঃ আমায় বলেছে না আর কিছু ! গণশাকে জিগ্‌‌গেস কর ? কিরে গণশা, ওকে দাঁড়াতে বলেছে না ?" গণেশের বুদ্ধি কিছুটা মোটা, সে আস্তে আস্তে উঠিয়া গিয়া পণ্ডিতমশাইকে ডাকিতে লাগিল, "পণ্ডিতমশাই ! ও পণ্ডিতমশাই !"

পণ্ডিতমশাই বিরক্ত হ‌‌ইয়া বলিলেন, "কি বলছিস বল্‌‌ না।" গণেশচন্দ্র অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞাসা করিল, "কাকে দাঁড়াতে বলেছেন, পণ্ডিতমশাই ?" পণ্ডিতমশাই কট্‌‌মটে চোখ মেলিয়াই সাংঘাতিক ধমক দিয়া বলিলেন, "তোকে বলেছি, দাঁড়া।" বলিয়াই আবার চোখ বুজিলেন।

গণেশচন্দ্র দাঁড়াইয়া রহিল। আবার মিনিটখানেক সব চুপচাপ। হঠাৎ‌ ভোলা বলিল, "ওকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেছিল না ভাই ?" গণেশ বলিল, "কক্ষনো না, খালি দাঁড়াতে বলেছে।" বিশু বলিল, "এক আঙুল তুলে দেখিয়েছিল, তার মানেই এক পায়ে দাঁড়া।" পণ্ডিতমশাই যে ধমক দিবার সময় তর্জনী তুলিয়াছিলেন, এ কথা গণেশ অস্বীকার করিতে পারিল না। বিশু আর ভোলা জেদ করিতে লাগিল, "শিগগির এক পায়ে দাঁড়া বলছি, তা না হলে এক্ষুণি বলে দিচ্ছি।"

গণেশ বেচারা ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি এক পা তুলিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। অমনি ভোলা আর বিশুর মধ্যে তুমুল তর্ক বাঁধিয়া গেল। এ বলে ডান পায়ে দাঁড়ানো উচিত, ও বলে, না, আগে বাঁ পা। গণেশ বেচারার মহা মুশকিল ! সে আবার পণ্ডিতমশাইকে জিজ্ঞাসা করিতে গেল, "পণ্ডিতমশাই, কোন্‌‌ পা ?"

পণ্ডিতমশাই তখন কি যেন একটা স্বপ্ন দেখিয়া অবাক হ‌‌ইয়া নাক ডাকাইতেছিলেন। গণেশের ডাকে হঠাৎ‌ তন্দ্রা ছুটিয়া যাওয়ায় তিনি সাংঘাতিক রকম বিষম খাইয়া ফেলিলেন। গণেশ বেচারা তার প্রশ্নের এ রকম জবাব একেবারেই কল্পনা করে নাই, সে ভয় পাইয়া বলিল, "ঐ যা কি হবে ?" ভোলা বলিল, "দৌড়ে জল নিয়ে আয়।" বিশু বলিল, "শিগ্‌‌গির মাথায় জল দে।" গণেশ এক দৌড়ে কোথা হ‌‌ইতে একটা কুঁজা আনিয়া ঢক্‌‌ঢক্‌‌ করিয়া পণ্ডিতমশায়ের টাকের উপর জল ঢালিতে লাগিল। পণ্ডিতমশায়ের বিষম খাওয়া খুব চট্‌‌পট্‌‌ থামিয়া গেল, কিন্তু তাঁহার মুখ দেখিয়া গণেশের হাতে জলের কুঁজা ঠক্‌‌ঠক্‌‌ করিয়া কাঁপিতে লাগিল।

ভয়ে সকলেই খুব গম্ভীর হ‌‌ইয়া রহিল, খালি শ্যামলাল বেচারার মুখটাই কেমন যেন আহ্লাদি গোছের হাসি হাসি মতো, সে কিছুতেই গম্ভীর হ‌‌ইতে পারিল না। পণ্ডিতমশায়ের রাগ হঠাৎ‌ তার উপরেই ঠিক্‌‌রাইয়া পড়িল। তিনি বাঘের মতো গুম্‌‌গুমে গলায় বলিলেন, "উঠে আয় !" শ্যামলাল ভয়ে কাঁদ কাঁদ হ‌‌ইয়া বলিল, "আমি কি করলাম? গণশা জল ঢাল্‌‌ল, তা আমার দোষ কি?" পণ্ডিতমশাই মানুষ ভালো, তিনি শ্যামলালকে ছাড়িয়া গণ্‌‌শার দিকে তাকাইয়া দেখেন তাহার হাতে তখনও জলের কুঁজা। গণেশ কোনো প্রশ্নের অপেক্ষা না করিয়াই বলিয়া ফেলিল, "ভোলা আমাকে বলেছিল।" ভোলা বলিল, "আমি তো খালি জল আনতে বলেছিলম। বিশু বলেছিল, মাথায় ঢেলে দে।" বিশু বলিল, "আমি কি পণ্ডিতমশায়ের মাথায় দিতে বলেছি? ওর নিজের মাথায় দেওয়া উচিত ছিল, তাহলে বুদ্ধিটা ঠাণ্ডা হত।"

পণ্ডিতমশাই খানিকক্ষণ কটমট করিয়া সকলের দিকে তাকাইয়া তারপর বলিলেন, "যা ! তোরা ছেলেমানুষ তাই কিছু বললাম না। খবরদার আর অমন করিসনে।" সকলে হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিল, কিন্তু পণ্ডিতমশাই কেন যে হঠাৎ‌ নরম হ‌‌ইয়া গেলেন কেহ তাহা বুঝিল না। পণ্ডিতমশায়ের মনে হঠাৎ‌ যে তাঁর নিজের ছেলেবেলার কোন দুষ্টুমির কথা মনে পড়িয়া গেল, তাহা কেবল তিনি‌‌ই জানেন।

Read more ...

আজব খেলা-সুকুমার রায়।

আজব খেলা
সুকুমার রায়


সোনার মেঘে আল্‌তা ঢেলে সিঁদুর মেখে গায়
সকাল সাঁঝে সূর্যি মামা নিত্যি আসে যায় ।
নিত্যি খেলে রঙের খেলা আকাশ ভ'রে ভ'রে
আপন ছবি আপনি মুছে আঁকে নূতন ক'রে ।
ভোরের ছবি মিলিয়ে দিল দিনের আল জ্বেলে
সাঁঝের আঁকা রঙিন ছবি রাতের কালি ঢেলে ।
আবার আঁকে আবার মোছে দিনের পরে দিন
আপন সাথে আপন খেলা চলে বিরামহীন ।
ফুরায় নাকি সোনার খেলা ? রঙের নাহি পার ?
কেউ কি জানে কাহার সাথে এমন খেলা তার ?
সেই খেলা, যে ধরার বুকে আলোর গানে গানে
উঠ্‌ছে জেগে- সেই কথা কি সুর্যিমামা জানে ?

Read more ...

আহ্লাদী-সুকুমার রায়।

আহ্লাদী
সুকুমার রায়

হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহ্লাদী,
তিনজনেতে জট্‌লা ক'রে ফোক্‌লা হাসির পাল্লা দি ।
হাসতে হাসতে আসছে দাদা, হাসছি আমি, হাসছে ভাই,
হাসছি কেন কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই ।
ভাবছি মনে, হাসছি কেন ? থাকব হাসি ত্যাগ ক'রে,
ভাবতে গিয়ে ফিকফিকিয়ে ফেল্‌ছি হাসি ফ্যাক্‌ ক'রে ।
পাচ্ছে হাসি চাপতে গিয়ে, পাচ্ছে হাসি চোখ বুজে,
পাচ্ছে হাসি চিম্‌টি কেটে নাকের ভিতর নোখ্‌ গুঁজে ।
হাসছি দেখে চাঁদের কলা জোলার মাকু জেলের দাঁড়
নৌকা ফানুস পিঁপড়ে মানুষ রেলের গাড়ী তেলের ভাঁড় ।
পড়তে গিয়ে ফেলছি হেসে 'ক খ গ' আর শ্লেট দেখে-
উঠ্‌ছে হাসি ভস্‌ভসিয়ে সোডার মতন পেট থেকে ।
Read more ...

আদুরে পুতুল-সুকুমার রায়।

আদুরে পুতুল
সুকুমার রায়


আদুরে পুতুল
যাদুরে আমার আদুরে গোপাল, নাকটি নাদুস থোপ্‌না গাল,
ঝিকিমিকি চোখ মিট্‌মিটি চায়, ঠোঁট দুটি তায় টাট্‌কা লাল ।
মোমের পুতুল ঘুমিয়ে থাকুক্‌ দাঁত মেলে আর চুল খুলে-
টিনের পুতুল চীনের পুতুল কেউ কি এমন তুলতুলে ?
গোব্‌দা গড়ন এমনি ধরন আব্‌দারে কেউ ঠোঁট ফুলোয় ?
মখমলি রং মিষ্টি নরম- দেখ্‌ছ কেমন হাত বুলোয় !
বল্‌বি কি বল্‌ হাব্‌লা পাগল আবোল তাবোল কান ঘেঁষে,
ফোক্‌লা গদাই যা বলবি তাই ছাপিয়ে পাঠাই "সন্দেশে"

Read more ...

অবুঝ-সুকুমার রায়।


অবুঝ
সুকুমার রায়

চুপ করে থাক্‌, তর্ক করার বদ্‌অভ্যাসটি ভাল না,
এক্কেবারেই হয় না ওতে বুদ্ধিশক্তির চালনা ।
দেখ্‌ ত দেখি আজও আমার মনের তেজটি নেভেনি-
এইবার শোন্‌ বলছি এখন- কি বলছিলেম ভেবেনি !
 বলছিলেম কি, আমি একটা বই লিখেছি কবিতার,
উঁচু রকম পদ্যে লেখা আগাগোড়াই সবি তার ।
তাইতে আছে "দশমুখে চায়, হজম করে দশোদর,
শ্মশানঘাটে শষ্পানি খায় শশব্যস্ত শশধর ।"
এই কথাটার অর্থ যে কি, ভাবছে না কেউ মোটেও-
বুঝছে না কেউ লাভ হবে কি, অর্থ যদি জোটেও ।
এরই মধ্যে হাই তুলিস্‌ যে ? পুঁতে ফেল্‌ব এখনি,
ঘুঘু দেখেই নাচতে শুরু, ফাঁদ ত বাবা দেখনি !
কি বললি তুই ? সাতান্নবার শুনেছিস্‌ ঐ কথাটা ?
এমন মিথ্যে কইতে পারিস্‌ লক্ষ্মীছাড়া বখাটা !
আমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সাধ্যি নেই কো পেরোবার
হিসেব দেব, বলেছি এই চোদ্দবার কি তেরোবার ।
সাতান্ন তুই গুনতে পারিস্‌ ? মিথ্যেবাদি গুনে যা-
ও শ্যামাদাস ! পালাস্‌ কেন ? রাগ করিনি, শুনে যা ।

Read more ...

আবোল-তাবোল--সুকুমার রায়।


আবোল তাবোল
সুকুমার রায়

মেঘ মুলুকে ঝাপ্‌সা রাতে,
রামধনুকের আব্‌ছায়াতে,
তাল বেতালে খেয়াল সুরে,
তান ধরেছি কণ্ঠ পুরে ।
হেথায় নিষেধ নাই রে দাদা,
নাই রে বাঁধন নাইরে বাধা ।
হেথায় রঙিন্‌ আকাশ তলে,
স্বপন দোলা হাওয়ায় দোলে,
সুরের নেশায় ঝরনা ছোটে,
আকাশ কুসুম আপনি ফোটে,
রঙিয়ে আকাশ, রঙিয়ে মন
চমক জাগে ক্ষণে ক্ষণ !
আজকে দাদা যাবার আগে
বল্‌ব যা মোর চিত্তে লাগে-
নাই বা তাহার অর্থ হোক্‌
নাইবা বুঝুক বেবাক্‌ লোক ।
আপনাকে আজ আপন হতে
ভাসিয়ে দিলাম খেয়াল স্রোতে ।
ছুট্‌লে কথা থামায় কে ?
আজকে ঠেকায় আমায় কে ?
আজকে আমার মনের মাঝে
ধাঁই ধপাধপ্‌ তব্‌লা বাজে-
রাম-খটাখট্‌ ঘ্যাচাং ঘ্যাঁচ্‌
কথায় কাটে কথার প্যাঁচ্‌ ।
আলোয় ঢাকা অন্ধকার,
ঘণ্টা বাজে গন্ধে তার ।
গোপন প্রাণে স্বপন দূত,
মঞ্চে নাচেন পঞ্চ ভূত !
হ্যাংলা হাতি চ্যাং-দোলা,
শূন্যে তাদের ঠ্যাং তোলা ।
মক্ষি রাণী পক্ষীরাজ-
দস্যি ছেলে লক্ষী আজ ।
আদিম কালের চাঁদিম হিম
তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম ।
ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর,
গানের পালা সাঙ্গ মোর ।
Read more ...

দাশুর কীর্তি-সুকুমার রায়।


দাশুর কীর্তি
সুকুমার রায়



শিশু সাহিত্যে সুকুমার রায়ের অবস্থান রাজার থেকে কিছু কম নয়। তিনি এমন একজন সাহিত্যিক যিনি সত্যিকারিই একজন শিশুর মতো করে ভাবতে পারতেন।বাংলা সাহিত্যে তাঁর আগে কেউ শিশুদের জগৎটিকে এত সুন্দর করে তুলে ধরতে পারেননি। দাশু চরিত্রটি সুকুমার রায়ের একটি অমর কীর্তি। এরকম একটা পাগলা বন্ধু এত বছর পরে আজও তুমি তোমার পাশে পেয়েই যাবে। দাশুর অদ্ভুতুরে কাজের গল্পের কোনো সীমা নেই। সেরকম একই গল্প দাশুর কীর্তি।নবীনচাঁদ ইস্কুলে এসেই বলল, কাল তাকে ডাকাতে ধরেছিল। শুনে স্কুল সুদ্ধ সবাই হাঁ হাঁ করে ছুটে এল। 'ডাকাতে ধরেছিল? বলিস কিরে!' ডাকাত না তো কি? বিকাল বেলায় সে জ্যোতিলালের বাড়িতে পড়তে গিয়েছিল, সেখান থেকে ফিরবার সময় ডাকাতরা তাকে ধরে তার মাথায় চাঁটি মেরে, তার নতুন কেনা শখের পিরানটিতে কাদাজলের পিচ্‌কিরি দিয়ে গেল। আর যাবার সময় ব'লে গেল, "চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক- নইলে দড়াম্‌ করে তোর মাথা উড়িয়ে দেব।" তাই সে ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে রাস্তার ধারে প্রায় বিশ মিনিট দাঁড়িয়েছিল, এমন সময় তার বড়মামা এসে তার কান ধরে বাড়িতে নিয়ে বললেন, "রাস্তায় সঙ্‌ সেজে ইয়ার্কি করা হচ্ছিল?" নবীনচাঁদ কাঁদ-কাঁদ গলায় ব'লে উঠল, "আমি কি করব? আমায় ডাকাতে ধরেছিল-" শুনে তার মামা প্রকাণ্ড এক চড় তুলে বললেন, "ফের জ্যাঠামি !" নবীনচাঁদ দেখল মামার সাথে তর্ক করা বৃথা- কারণ, সত্যি সত্যি তাকে ডাকাতে ধরেছিল, একথা তার বাড়ির কাউকে বিশ্বাস করানো শক্ত ! সুতরাং তার মনের দুঃখ এতক্ষণ মনের মধ্যেই চাপা ছিল।যাহোক ইস্কুলে এসে তার দুঃখ অনেকটা বোধ হয় দূর করতে পেরেছিল, কারণ স্কুলে অন্তত অর্ধেক ছেলে তার কথা শুনবার জন্য একেবারে ব্যস্ত হয়ে ঝুঁকে পড়েছিল, এবং তার প্রত্যেকটি ঘামাচি, ফুস্‌কুড়ি আর চুলকানির দাগটি পর্যন্ত তারা আগ্রহ করে ডাকাতির সুস্পষ্ট প্রমাণ ব'লে স্বীকার করেছিল। দু একজন যারা তার কনুয়ের আঁচড়টাকে পুরনো ব'লে সন্দেহ করেছিল, তারাও বলল যে হাঁটুর কাছে যে ছড়ে গেছে, সেটা একেবারে টাটকা নতুন। কিন্তু তার পায়ের গোড়ালিতে যে ঘায়ের মতো ছিল সেটাকে দেখে কেষ্টা যখন বললে, "ওটা তো জুতোর ফোস্কা", তখন নবীনচাঁদ ভয়ানক চটে বললে, "যাও, তোমাদের কাছে আর কিছুই বলব না।" কেষ্টাটার জন্য আমাদের আর কিছু শোনাই হল না।ততক্ষণে দশটা বেজে গেছে, ঢং ঢং করে ইস্কুলের ঘণ্টা পড়ে গেল। সবাই যে যার ক্লাশে চলে গেলাম, এমন সময় দেখি পাগলা দাশু একগাল হাসি নিয়ে ক্লাশে ঢুকছে। আমরা বললাম, "শুনেছিস? কাল নবুকে ডাকাতে ধরেছিল।" যেমন বলা অমনি দাশরথি হঠাৎ হাত পা ছুঁড়ে বই-টই ফেলে, খ্যাঃ-খ্যাঃ-খ্যাঃ-খ্যাঃ করে হাসতে হাসতে একেবারে মেঝের উপর বসে পড়ল। পেটে হাত দিয়ে গড়াগড়ি করে, একবার চিৎ হয়ে, একবার উপুড় হয়ে, তার হাসি আর কিছুতেই থামে না।দেখে আমরা তো অবাক! পণ্ডিত মশাই ক্লাশে এসেছেন, তখনও পুরোদমে তার হাসি চলছে। সবাই ভাবলে, 'ছোঁড়াটা ক্ষেপে গেল না কি?' যাহোক, খুব খানিকটা হুটোপাটির পর সে ঠাণ্ডা হয়ে, বই-টই গুটিয়ে বেঞ্চের উপর উঠে বসল। পণ্ডিত মশাই বললেন, "ওরকম হাসছিলে কেন?" দাশু নবীনকে দেখিয়ে বললে, "ঐ ওকে দেখে।" পণ্ডিত মশাই খুব কড়া ধমক লাগিয়ে তাকে ক্লাশের কোনায় দাঁড় করিয়ে রাখলেন। কিন্তু পাগলার তাতেও লজ্জা নেই, সে সারাটি ঘণ্টা থেকে থেকে বই দিয়ে মুখ আড়াল করে ফিক্‌ফিক্‌ করে হাসতে লাগল।টিফিনের ছুটির সময় নবু দাশুকে চেপে ধরল, "কিরে দেশো! বড় যে হাসতে শিখেছিস!" দাশু বললে, "হাসব না? তুমি কাল ধুনচি মাথায় দিয়ে কি রকম নাচটা নেচেছিলে, সে তো আর তুমি নিজে দেখো নি? দেখলে বুঝতে কেমন মজা!" আমরা সবাই বললাম, "সে কি রকম? ধুনচি মাথায় নাচছিল মানে?" দাশু বললে, "তাও জানো না? ঐ কেষ্টা আর জগাই- ঐ যা! বলতে না বারণ করেছিল !" আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, "কি বলছিস ভালো করেই বল্‌ না।" দাশু বললে, "কালকে শেঠেদের বাগানের পিছন দিয়ে নবু একলা একলা বাড়ি যাচ্ছিল, এমন সময় দুটো ছেলে— তাদের নাম বলা বারণ— তারা দৌড়ে এসে নবুর মাথায় ধুনচির মত কি একটা চাপিয়ে, তার গায়ের উপর আচ্ছা করে পিচ্‌কিরি দিয়ে পালিয়ে গেল।" নবু ভয়ানক রেগে বলল, "তুই তখন কি করছিলি?" দাশু বললে, "তুমি তখন মাথার থলি খুলবার জন্য ব্যাঙের মত হাত পা ছুঁড়ে লাফাচ্ছিলে দেখে আমি বললাম— ফের নড়বি তো দড়াম করে মাথা উড়িয়ে দেব। শুনে তুমি রাস্তার মধ্যে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলে, তাই আমি তোমার বড়মামাকে ডেকে আনলাম।" নবীনচাঁদ যেমন বাবুয়ানা, তেমনি তার দেমাক- সেইজন্য কেউ তাকে পছন্দ করত না, তার লাঞ্ছনার বর্ণনা শুনে সবাই বেশ খুশি হলাম। ব্রজলাল ছেলেমানুষ, সে ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বললে, "তবে যে নবীনদা বলছিল, তাকে ডাকাতে ধরেছে?" দাশু বললে, "দূর বোকা ! কেষ্টা কি ডাকাত?" বালতে না বলতেই কেষ্টা সেখানে হাজির। কেষ্টা আমাদের উপরের ক্লাশে পড়ে, তার গায়েও বেশ জোর আছে। নবীনচাঁদ তাকে দেখামাত্র শিকারী বেড়ালের মত ফুলে উঠল। কিন্তু মারামারি করতে সাহস পেল না, খানিকক্ষণ কট্‌মট্‌ করে তাকিয়ে সেখান থেকে সরে পড়ল। আমরা ভাবলাম গোলমাল মিটে গেল।কিন্তু তার পরদিন ছুটির সময় দেখি, নবীন তার দাদা মোহনচাঁদকে নিয়ে হন্‌হন্‌ করে আমাদের দিকে আসছে। মোহনচাঁদ ম্যাট্রিক ক্লাশে পড়ে, সে আমাদের চাইতে অনেক বড়, তাকে ওরকম ভাবে আসতে দেখেই আমরা বুঝলাম, এবার একটা কাণ্ড হবে। মোহন এসেই বলল, "কেষ্টা কই?" কেষ্টা দূর থেকে তাকে দেখেই কোথায় সরে পড়েছে, তাই তাকে আর পাওয়া গেল না। তখন নবীনচাঁদ বললে, "ওই দাশুটা সব জানে, ওকে জিজ্ঞাসা কর।" মোহন বললে, "কি হে ছোকরা, তুমি সব জানো নাকি?" দাশু বললে, "না, সব আর জানব কোত্থেকে- এইতো সবে ফোর্থ ক্লাশে পড়ি, একটু ইংরিজি জানি, ভূগোল বাংলা জিওমেট্রি—" মোহনচাঁদ ধমক দিয়ে বললে, "সেদিন নবুকে যে কারা সব ঠেঙিয়েছিল, তুমি তার কিছু জানো কিনা?" দাশু বললে, "ঠাঙায়নি তো- মেরেছিল, খুব অল্প মেরেছিল।" মোহন একটুখানি ভেংচিয়ে বললে, "খুব অল্প মেরেছে, না? তবু কতখানি শুনি?" দাশু বললে, "সে কিছুই না— ওরকম মারলে একটুও লাগে না।" মোহন আবার ব্যাঙ্গ করে বললে, "তাই নাকি? কি রকম মারলে পরে লাগে?" দাশু খানিকটা মাথা চুলকিয়ে তারপর বললে, "ঐ সেবার হেডমাস্টার মশাই তোমায় যেমন বেত মেরেছিলেন সেই রকম !" এ কথায় মোহন ভয়ানক চটে দাশুর কান ম'লে চিৎকার করে বলল, "দেখ্‌ বেয়াদপ ! ফের জ্যাঠামি করবি তো চাব্‌‌কিয়ে লাল করে দেব। কাল তুই সেখানে ছিলি কিনা, আর কি কি দেখছিলি খুলে বলবি কিনা?"জানোই তো দাশুর মেজাজ কেমন পাগলাটে গোছের, সে একটুখানি কানে হাত বুলিয়ে তারপর হঠাৎ মোহনচাঁদকে ভীষণভাবে আক্রমণ করে বসল। কিল, ঘুষি, চড়, আঁচড়, কামড় সে এমনি চটপট চালিয়ে গেল যে আমরা সবাই হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম। মোহন বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি যে, ফোর্থ ক্লাশের একটা রোগা ছেলে তাকে অমন ভাবে তেড়ে আসতে সাহস পাবে- তাই সে একেবারে থতমত খেয়ে কেমন যেন লড়তেই পারল না। দাশু তাকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে মাটিতে চিৎ করে ফেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, "এর চাইতেও ঢের আস্তে মেরেছিল।" ম্যাট্রিক ক্লাশের কয়েকটি ছেলে সেখানে দাড়িয়েছিল, তারা যদি মোহনকে সামলে না ফেলত, তাহলে সেদিন তার হাত থেকে দাশুকে বাঁচানোই মুশকিল হত।পরে একদিন কেষ্টাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, "হ্যাঁরে, নবুকে সেদিন তোরা অমন করলি কেন?" কেষ্টা বললে, "ঐ দাশুটাই তো শিখিয়েছিল ওরকম করতে। আর বলছিল, তা হলে একসের জিলিপি পাবি। আমরা বললাম, "কৈ আমাদের তো ভাগ দিলিনে?" কেষ্টা বলল, "সে কথা আর বলিস কেন? জিলিপি চাইতে গেলুম, হতভাগা বলে কিনা আমার কাছে কেন? ময়রার দোকানে যা, পয়সা ফেলে দে, যত চাস জিলিপি পাবি।আচ্ছা, দাশু কি সত্যি সত্যি পাগল, না কেবল মিচ্‌‌কেমি করে?
Read more ...

আলো দিয়ে আগুন জ্বালানে।




পৃথিবীর সকল শক্তির উৎস সূর্যালোক।
সূর্যের আলো ব্যাবহার করে আমরা নানান রকমের শক্তি পেতে পারি।
আজকে আমরা সেরকম একটি পরীক্ষা করে দেখবো যে,
আসলেই সূর্য থেকে অন্য শক্তি পাওয়া যায় কি না।
আমাদের পরীক্ষার অনুমান হচ্ছে,
সূর্যের শক্তি থেকে আমরা একটি কাগজে আগুন জ্বালাতে পারবো।
এই পরীক্ষাটি করতে আমাদের যা যা লাগবে—
১। পানি২। বক্রাকৃতিক পানির প্লাস্টিক বা কাঁচের বোতল
৩। সাদা কাগজ৪। কালো মার্কার
৫। কিছু দাহ্য পদার্থ।
যেমন- কাগজযেভাবে করবো—
১। সাদা কাগজের মাঝ বরাবর কালো মার্কার দিয়ে
একটা বৃত্ত বা চতুর্ভুজ আঁকবো এবং এর পরিসীমার ভিতরের অংশটি পুরো কালো রঙ করে দিবো
২। এবার বক্রাকৃতিক পানির বোতলটিতে পানি ভরে সব কিছু নিয়ে বাইরে সূর্যের আলোতে নিয়ে আসবো।
৩। সূর্যের আলো কাঁচের বোতলের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করলে
দেখা যাবে যে আলো দুইটা গাঢ় বৃত্ত তৈরি করেছে।
সেই বৃত্তটিকে কালো দাগের মধ্যে ফেলতে হবে।
এভাবে কিছুক্ষণ ধরে রাখলে কালো দাগ থেকে ধোয়া উঠা শুরু করবে। তখন অন্য দাহ্য পদার্থ এর মধ্যে নিয়ে রাখলে আসতে আস্তে আগুন জ্বলে উঠবে।
কেন এমন হলো—
এই পরীক্ষার বিজ্ঞানের অনেকগুলো সাধারণ মূলনীতির প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন পানির ভিতর দিয়ে বস্তুর আকৃতি বড় করা যায়। আমরা আগেও পানির ফোটাকে ম্যাগনিফায়িং গ্লাসের কাজে ব্যবহার করার পরীক্ষা করেছি। আবার বক্রাকৃতির বোতল উত্তল লেন্সের কাজ করে। ফলে আলো একটা নির্দিষ্ট বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়। তৃতীয় মূলনীতি ছিলো কালো বস্তু তাপ অন্য সব রঙের বস্তুর চেয়ে বেশি শোষণ করে, এবং আমরা এও জানি যে সূর্যের আলো আলোর সঙ্গে তাপও নিয়ে আসে। এই পরীক্ষায় আমরা সেই আলোকে আরও বাড়িয়ে তাকে কেন্দ্রীভূত করে কালো বস্তুর মাধ্যমে সর্বোচ্চ শোষণ ঘটিয়েছি ফলে খুব সহজেই কাগজটি তাপ শোষণ করে জ্বলে উঠেছে।
Read more ...

ডিলেট হয়ে যাওয়া ফাইল ফিরিয়ে আনার উপায়।


ভুল করে বা কোনো কারণে কম্পিউটার থেকে
ফাইলমুছে ফেলার পর ব্যাপারটা দ্রুত ধরতে পারলে
সাধারণত তথ্য উদ্ধার করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
মুছে যাওয়ার পরযতবারই হার্ডডিস্কে নতুন কোনো তথ্য লেখা বা ফাইলতৈরি হবে,
তথ্য উদ্ধারের সম্ভাবনাও তত কমতে থাকবে।
তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইল যদি মুছেই যায়,
তাহলেকম্পিউটার একটু কম ব্যবহার করলে তথ্য উদ্ধার করাটা সহজহবে।
রিসাইকল বিন পরীক্ষা করুনউইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারগুলোতে
নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে স্বাভাবিকভাবে মুছে যাওয়াফাইলগুলো রিসাইকল বিনে জমা রাখে।
ব্যবহারকারীপরবর্তী সময়ে প্রয়োজন মনে করলে সেখানথেকে
মুছে যাওয়া ফাইল সহজে উদ্ধার করতে পারেন।
তাই মুছে যাওয়া ফাইল উদ্ধার করতে চাইলে প্রথমেসেখানেই খোঁজ করুন।
ডেস্কটপে সাধারণত রিসাইকল বিনের একটি আইকন থাকে,
এটি খুলে যদি সেখানে প্রয়োজনীয় ফাইলটি পাওয়া যায়,
তাহলে তাতে ডান ক্লিক করে রিস্টোর অপশনে ক্লিককরুন।
যেখান থেকে ফাইলটি মুছে ফেলা হয়েছিল,
সেখানে আবার চলে আসবে।ব্যাকআপ ব্যবহারহার্ডড্রাইভ বা
ডকুমেন্ট লাইব্রেরি যদি নিয়মিতভাবে অন্যকোথাও ব্যাকআপ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে,
তাহলেসেখানে মুছে যাওয়া ফাইলের একটা কপি থাকতে পারে।
ব্যাকআপ যদি বহনযোগ্য হার্ডডিস্ক বা পেনড্রাইভেনেওয়া হয়ে থাকে,
তাহলে তথ্য উদ্ধারের জন্যসেটিও ভালো একটি উৎস।
তৃতীয় পক্ষের সফটওয়্যার ব্যবহারমুছে যাওয়া ফাইল যদি রিসাইকল বিনেও পাওয়া না যায়,
তাহলেওসেসব ফাইল হার্ডডিস্কে থাকতে পারে।
এসব তথ্যউদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যার রয়েছে।
RecuvaPortable তেমনই একটি সফটওয়্যার।
সহজ ব্যবহারবিধিরপাশাপাশি বহনযোগ্য এ সফটওয়্যারটি বিনা মূল্যেই পাওয়া যায়।
তাই সফটওয়্যারটি ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে নিলেইহলো,
ইনস্টল করার প্রয়োজন পড়বে না। সবচেয়েভালো হয়,
অন্য কোনো কম্পিউটার থেকে এটিনামিয়ে আনজিপ করে
কোনো পেনড্রাইভে কপিকরলে।তারপর মুছে যাওয়া ফাইলের কম্পিউটারে
পেনড্রাইভটিপ্রবেশ করিয়ে সেখান থেকে সফটওয়্যারটি চালু করুন।
সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করুন৷
Read more ...

কিভাবে আপনার এন্ড্রয়েড ফোনকে রুট করবেন।

App Name: Kingroot
এখন রুট করার জনপ্রিয় অ্যাপ হলো কিংরুট।
এটা মোবাইল দিয়েই করা যায়। PC লাগবে না।
 আমিও কিংরুট দিয়ে ফোন রুট করেছি।
এটা দিয়ে নিক্ষুত ভাবে রুট করা যায়। এবং খুব সহজেই রুট করা যায়।
তোহ্ তলুন শুরু করি।
** যা যা লক্ষ রাখবেন
১. মোবাইলে মিনিমাম ৩০-৩৫% এর উপরে চার্জ রাখবেন
২. ডাটা কানেকশন অন রাখবেন(3G)

 এখান থেকে কিংরুট Latest Verson 4.9.3 ডাউনলোড করে নিন তারপর ইন্সটল করুন।

।এবার settings > about phone> Build Number এ যান। সেখানে পর পর ৩ বার ক্লিক করুন। ক্লিক করার পর ডেভলাপার অপ্সন active হবে।এবার settings > Developer Optionsএটা on করুন। এবার USB Debugging mode এ ঠিক চিহ্ন দিন।
এবার kingroot এ যান। App open করার পর Get Now ক্লিক করুন।




এবার অপেক্ষা করুন ১০০% হলে হয়ে যাবে মোবাইল রুট।এবার ফোন রিবোট দিন।রুট হয়েছে কিনা root cheaker Pro app ডাউনলোড করুন তারপর চেক করুন।Root Cheaker app টি Play store থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
Read more ...