Page

Choose Your Language

Wednesday, July 6, 2016

সৌরজগ-Solar System



সৌরজগৎঃ

সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে বোঝায়। এর মধ্যে আছে: আটটি গ্রহ, তাদের ১৬২টি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ, তিনটি বামন গ্রহ ও তাদের চারটি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র বস্তু। শেষোক্ত শ্রেণীর মধ্যে আছে গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু, এবং আন্তঃগ্রহীয় ধুলিমেঘ। মৌলিক ব্যাখ্যা অনুসারে সৌর জগতের মধ্যে অবস্থান করছে: সূর্য (জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক প্রতীক ☉), চারটি পার্থিব গ্রহ, একটি গ্রহাণু বেষ্টনী যা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথুরে বস্তু দ্বারা গঠিত, চারটি গ্যাসীয় দৈত্য এবং একটি দ্বিতীয় বেষ্টনী যা কাইপার বেষ্টনী  নামে পরিচিত, এতে বরফ শীতল পদার্থ রয়েছে। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে গ্রহগুলো হল:
  1. বুধ (☿),
  2. শুক্র (♀),
  3. পৃথিবী (⊕),
  4. মঙ্গল (♂),
  5. বৃহস্পতি (♃),
  6. শনি (♄),
  7. ইউরেনাস(♅), এবং
  8. নেপচুন (♆)।
আটটির মধ্যে ছয়টি গ্রহের নিজস্ব প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে। গ্যাসীয় দানবের প্রত্যেকটির চারদিকে আবার গ্রহীয় বলয় রয়েছে যা ধূলিকণা ও অন্যান্য কণা দ্বারা গঠিত। পৃথিবী ব্যতীত সব গ্রহের ইংরেজি নাম বিভিন্ন গ্রিক  দেবতাদের নামে রাখা হয়েছে। তিনটি বামন গ্রহ হচ্ছে: প্লুটো (♇),কাইপার বেষ্টনী বৃহত্তম বস্তু, সেরেস (Ceres symbol.svg), গ্রহাণু বেষ্টনীর বৃহত্তম বস্তু, এবং এরিস, যা বিক্ষিপ্ত চাকতির মধ্যে অবস্থান করে।
কিছু সংজ্ঞাঃ

সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণরত বস্তুগুলোকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়: , বামন গ্রহ এবং ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তু।
গ্রহ, সূর্যকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান এমন একটি বস্তু , ক) যার নিজেকে গোলকীয় আকারে পরিণত করার মত যথেষ্ট পরিমাণ ভর রয়েছে এবং খ) যা তার নিকটতম প্রতিবেশে অবস্থিত সব ক্ষুদ্র বস্তুকে অপসারণ করেছে। এখন পর্যন্ত জানা তথ্যমতে মোট আটটি গ্রহ রয়েছে, এদের নাম পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ২৪শে অগাস্ট ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশান গ্রহের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করেছে। এর পূর্বে প্লুটোসহ সৌরজগতে নয়টি গ্রহ ধরা হত। এই নতুন সংজ্ঞার আওতায় প্লুটোকে বামন গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
একটি বামন গ্রহকে তার নিকটতম প্রতিবেশে অবস্থিত অন্য কোনও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে অপসারণ করতে হয় না। গ্রহের সাথে এটিই কেবল তার পার্থক্য। বর্তমানে তিনটি বামন গ্রহ পাওয়া গেছে যাদের নাম পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে। আরও যে বস্তুগুলো বামন গ্রহের মর্যাদা পেতে পারে তারা হল:৯০৩৭৭ সেডনা, ৯০৪৮২ অরকাস এবং ৫০০০০ কুয়াওয়ার। ১৯৩০ সালে আবিষ্কারের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্লুটো সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসেবে চিহ্নিত হত। কিন্তু অধুনা সৌরজগতে প্লুটোর মতো অনেক বস্তু আবিষ্কৃত হচ্ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এরিস যা প্লুটোর চেয়ে আকারে সামান্য বড়।
সৌরজগতে অবশিষ্ট যে বস্তুগুলো রয়েছে তা হল: ক্ষুদ্র সৌরজাগতিক বস্তু বা এসএসএসবি (small solar system bodies)। প্রাকৃতিক উপগ্রহ বা চাঁদ হল সে সকল বস্তু যারা সূর্যের পরিবর্তে গ্রহ, বামন গ্রহ বা বিভিন্ন ক্ষুদ্র বস্তুকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়।
সূর্য থেকে একটি গ্রহের দূরত্বে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হয়। সূর্য থেকে কোন গ্রহের ন্যুনতম দূরত্বকে বলা হয় অনুসূর(perihelion) এবং বৃহত্তম দূরত্বকে বলা হয় অপসূর। সৌর জগতে অভ্যন্তরে বিভিন্ন দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সাধারণত জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক (astronomical unit – AU) ব্যবহার করেন। এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক হচ্ছে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব যার মান প্রায় ১৪৯,৫৯৮,০০০ কিমি (৯৩,০০০,০০০ মাইল)। প্লুটো সূর্য থেকে প্রায় ৩৮ এইউ দূরত্বে অবস্থিত আর সূর্যথেকে বৃহস্পতির দূরত্ব প্রায় ৫.২ এইউ। এক আলোকবর্ষ(জ্যোতির্বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত একক) সমান প্রায় ৬৩,২৪০ এইউ। মাঝেমাঝে সৌর জগতকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীন অংশে বিভক্ত করা হয়। অন্তঃ সৌরজগতের মধ্যে রয়েছে চারটি পার্থিব গ্রহ এবং প্রধান গ্রহাণু বেষ্টনী। কেউ কেউ বহিঃ সৌরজগৎশব্দটিও ব্যবহার করেন। এর মধ্যে থাকে গ্রহাণুর বাইরে অবস্থিত সবকিছু। অন্যরা এটিকে নেপচুনের বাইরে অবস্থিত একটি অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে। আর চারটি গ্যাসীয় দানব নিয়ে মধ্য অঞ্চল নামে একটি আলাদা অঞ্চলের কল্পনা করা হয়।
গড়ন ও কাঠামোঃ

সৌর জগতের প্রধান উপাদান হচ্ছে সূর্য যা একটি প্রধান ধারার জি২ শ্রেণীর তারা। সৌর জগতের সমগ্র মোট ভরের শতকরা ৯৯.৮৬ ভাগের জন্য দায়ী হল সূর্য এবং এটিই জগতের সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সূর্য বাদ দিলে সৌর জগতের বাকি যে ভর অবশিষ্ট থাকে তার শতকরা ৯০ ভাগের জন্য দায়ী হল বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহ। এই গ্রহ দুটি সূর্যকে প্রদক্ষিণরত সর্ববৃহৎ বস্তু। বর্তমানে উওরট মেঘ সম্বন্ধে যা বলা হচ্ছে তা সত্যি প্রমাণিত হলে এটিও সৌর জগতের ভরের একটি অংশ গঠন করবে। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান অধিকাংশ বস্তুই ভূ-কক্ষের নিকটে অবস্থিত। ভূ-কক্ষ একটি সরু রেখাপথ যা পৃথিবীর কক্ষের সাথে সমান্তরালে অবস্থিত। গ্রহগুলো ভূ-কক্ষের খুব নিকটে অবস্থিত যদিও ধূমকেতু ও অন্যান্য কাইপার বেষ্টনী বস্তু, সমূহ এর সাথে বেশ বড় কোণ করে অবস্থান করে।
সৌর জগতের ভিতর অবস্থিত গ্রহ এবং অন্যান্য অধিকাংশ বস্তু সূর্যের ঘূর্ণনের সাথে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘূর্ণায়মান থাকে। এই দিকটি বোঝা যায় সূর্যের উত্তর মেরুর উপর অবস্থিত একটি বিন্দুর সাপেক্ষে। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে, যেমন, হ্যালির ধূমকেতু। সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান বস্তুসমূহ কেপলারের গ্রহীয় গতীয় সূত্র মেনে চলে। প্রতিটি বস্তু সূর্যকে উপবৃত্তের একটি ফোকাসে রেখে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে। বস্তুটি সূর্যের যত নিকটে আসে তার গতিও তত বৃদ্ধি পায়। গ্রহসমূহের কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার যদিও কিছুটা উপবৃত্তের আকৃতি বজায় থাকে। কিন্তু গ্রহাণু এবং কাইপার বেষ্টনী বস্তুসমূহের কক্ষপথের আকৃতি সম্পূর্ণ উপবৃত্তাকার।
বৃহৎ দূরত্বের সাথে সঠিকভাবে খাপ খাওয়ানোর জন্য অনেকগুলো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, কক্ষপথগুলো একটি আরেকটি থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। কিন্তু বর্তমান প্রমাণ অনুসারে বাস্তবতা বেশ ভিন্ন। একটি গ্রহ সূর্য থেকে যত দূরে অবস্থিত তার কক্ষপথ এর পূর্ববর্তী গ্রহের কক্ষপথ থেকে তত দূরে অবস্থিত। উদাহরণস্বরুপ: শুক্র এবং বুধ গ্রহের কক্ষপথের মধ্যবর্তী দূরত্ব ০.৩৩ এইউ; কিন্তু শনি এবং বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৪.৩ এইউ। আবার নেপচুন এবং ইউরেনাসের কক্ষপথের মধ্যবর্তী দূরত্ব ১০.৫ এইউ। কক্ষীয় দূরত্বের মধ্যে এই পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে তাদের মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে অনেকবার। যেমন, বোডের তত্ত্ব। কিন্তু এই তত্ত্বগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায় নি।

No comments :

Post a Comment