Page

Choose Your Language

Tuesday, July 5, 2016

সর্দি কিভাবে হয়।



সর্দি আমাদের অতি পরিচিত একটি অসুখ। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যার জীবনে কখনো সর্দি হয়নি। মানুষ যেসকল রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয় সর্দির ভাইরাস এর মধ্যে প্রথম। বয়স্ক মানুষ বছরে ২ থেকে ৩ বার এবং শিশু বছরে ৬ থেকে ১২ বার সর্দি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। শীতকাল আসলে এর প্রকোপ অনেক বৃদ্ধি পায়।

লক্ষণ: গলাব্যথা, নাক বন্ধ থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়া, জ্বর। ক্ষেত্র বিশেষে মাথা ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, রুচি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
স্থায়িত্বকাল সাত থেকে দশ দিন। ক্ষেত্র বিশেষে সবোর্চ্চ তিন সপ্তাহের মতও থাকতে পারে।






যেভাবে সংক্রমণ হয়ঃ

সর্দির ভাইরাস কণিকাগুলো দূষিত আঙ্গুল বা দূষিত বাতাস থেকে আমাদের নাকের ভিতর জমা হয়। অতি অল্প সংখ্যক ভাইরাস কণিকা (১-৩০) সংক্রমণের জন্য যথেষ্ঠ। এরপর ভাইরাস কণিকাগুলো নিজে নিজে নাকের ভিতরের adenoid নামক এলাকায় প্রবেশ করে।

ভাইরাস কণিকাগুলো অনুনাসিক কোষ পৃষ্ঠের উপর অবস্থিত রিসেপ্টর (ICAM 1) এর সাথে যুক্ত হয়। এই রিসেপ্টর ভাইরাস পৃষ্ঠের উপর ডকিং পোর্ট নামক অংশের সাথে মিশে যায়।

রিসেপ্টর এর সাথে যুক্ত হওয়ার পর ভাইরাস একটি কোষের মধ্যে সংক্রমণ হওয়া শুরু করে। এরপর সংক্রমিত কোষে নতুন ভাইরাস কণিকা উৎপাদন শুরু হয়। তখন সংক্রমিত কোষগুলোর মৃত্যু ঘটে। এভাবে নতুন কোষে ভাইরাস সংক্রমন ঘটে এবং নতুন নতুন ভাইরাস কণিকা উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এর ফলে আমরা সর্দিতে আক্রান্ত হই।





সর্দি থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ঃ

আমরা কিছু কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে অতি সহজে সর্দি থেকে রক্ষা পেতে পারি। এরমধ্যে কয়েকটি নিচে লিখা হলঃ

--> সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি বা হাঁচি থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরে অবস্থান করুন। কারণ কাশির জীবাণু খুব সহজেই আপনার চোখ অথবা নাকের ভেতর দিয়ে সংক্রমিত হতে পারে।

--> হাত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। কারণ হাঁচি বা কাঁশির সাথে নির্গত ঠাণ্ডার জীবাণু যে কোন বস্তুতে লেগে থাকতে পারে। স্পর্শের মাধ্যমে তা হতে সংক্রমণ হতে পারে।

--> পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ করুন। যথেষ্ট পরিমাণে (কমপক্ষে দৈনিক আট গ্লাস) পানি গ্রহণ শরীর বিশুদ্ধ রাখে এবং দেহ থেকে জীবাণু নির্গমনে সাহায্য করে।

--> আঙ্গুল দিয়ে ঘন ঘন নাক অথবা চোখ খুটবেন না।

--> বিছানায় শুয়ে না থেকে হাঁটাহাঁটি বা মৃদু ব্যায়াম করুন।

--> রাতে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুমান।

--> কম চর্বিযুক্ত চিকেন স্যুপ খান। কারণ গরম গরম চিকেন স্যুপ প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান সরবরাহ করে দেহকে ঠাণ্ডা-সর্দির জীবানুর সাথে যুদ্ধে সাহায্য করে।



সর্দি হলে করণীয়ঃ

কফ কাশি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, গলা ব্যথা, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে রেজিস্ট্যার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ঔষধ গ্রহণ করুন।
Read more ...

আমরা কিভবে রং দেখি।



যদি লাল গোলাপ হঠাৎ কালো হয়ে যায়, যদি গাছের পাতা হয়ে যায় সাদা, শুভ্রতার সাদা রঙ যদি হয়ে যায় লাল, তাহলে কেমন লাগবে একটু ভাবুন তো? কি হবে ভালোবাসার গোলাপের, কি-ই বা হবে শুভ্রতার! বিশাল ঝামেলা। লাল গোলাপ হারাবে তার সকল আবেদন, গাছের পাতার বিমুগ্ধতা খুঁজতে গিয়ে বিফল হবে মানুষ। একটু বর্ণ বা রঙের পরিবর্তনের জন্য হয়ে যেতে পারে অনেক কিছু। সঠিক বস্তুর সঠিক রঙ হওয়া তাই বাঞ্চনীয়। আর এই রঙ দেখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমাদের চোখ এবং মস্তিষ্ক।



আমাদের মস্তিষ্কে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি হয় কিভাবে? আমরা কি সব রঙ সম্পর্কে জানি?

রঙ পর্যবেক্ষণের কাজটা মানুষের চোখ এবং মস্তিষ্ক কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথে করে থাকে। আমাদের চোখ এবং মস্তিস্ক একজোট হয়ে আলো-কে ট্রান্সলেট করে রঙে পরিণত করে। চোখের ভেতরে থাকা আলোক সংবেদী কোষ স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের মস্তিস্কে বার্তা প্রেরণ করে থাকে। অর্থাৎ এই আলোক সংবেদী কোষগুলো ডাকঘর এবং স্নায়ুগুলো ডাকপিয়নের মত কাজ করে। ডাকপিয়ন যেমন আমাদের কাছে চিঠি নিয়ে আসলে চিঠি পাবার পর আমাদের যেরকম আবেগের বিভিন্ন ধরণের অনুভূতি (হাসি,কান্না ইত্যাদি) সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি আলোক সংবেদী স্নায়ু মস্তিস্কে বার্তা প্রেরণ করলে আমাদের মস্তিস্ক তখন আমাদের মাঝে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি করে।

আমাদের চোখের যে রেটিনা আছে, সেটা মিলিয়ন মিলিয়ন আলোক সংবেদী কোষ দ্বারা আবৃত। এর কিছু কোষ হচ্ছে রড কোষ, আবার কিছু কোষ হচ্ছে কোণ কোষ। এই আলোক সংবেদী স্নায়ুমুখগুলো আমাদের মস্তিস্কে স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি করে এবং অপটিক নার্ভের (দর্শন স্নায়ু) মাধ্যমে মস্তিষ্কের কর্টেক্সে পাঠায়। এভাবেই আসলে আমাদের মাঝে রঙের অনুভূতি সৃষ্টি হয়।



কার মাথায় প্রথম রঙ নিয়ে গবেষণা করার কথাটা আসলো?

নিউটন সাহেবের মাথায় আপেল পড়ার পর থেকে উনি দুনিয়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কত কিছু আবিষ্কার করে।এই মহাকর্ষ আবিষ্কারের সাথেই তাঁর নাম সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হয়। মজার ব্যাপার হল, আলো নিয়ে প্রথম গবেষণা করেছেন এই নিউটন সাহেবই। তিনি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলেন যে, রঙ কোন বস্তুর নির্দিষ্ট কোন বৈশিষ্ট্য নয়, এটা আলাদা কোনো বস্তুও নয়। এটা কি করে সম্ভব? তাহলে আমরা যে আপেলের রঙ লাল দেখি, তার রঙ কি লাল নয়?

আসলে, বস্তুর পৃষ্ঠ বা তলের উপরে আলো পড়লে যদি বস্তুটি আলোর সবটুকু শোষণ করে কোন একটা নির্দিষ্ট রঙ শোষণ করতে না পেরে সেই রঙটিকে প্রতিফলিত করে দেয়, তাহলে আমরা বস্তুটিকে সেই নির্দিষ্ট রঙের দেখি।

সেই হিসাবে বলা যায়, আপেলের মাঝে লাল রঙ নেই। আপেলের পৃষ্ঠে বা তলে যখন আলো আপতিত হয়, তখন আপেলের পৃষ্ঠটি লাল ব্যতীত অন্যান্য সকল রঙ শোষণ করে নেয়, এবং লাল রঙকে প্রতিফলিত করে। তাই আমরা আপেলকে লাল রঙের দেখি। আমরা আসলে এই প্রতিফলিত আলো দেখেই ভাবি যে আপেলটি লাল রঙের। তাঁর মানে দাড়ায়, আমরা আসলে প্রতিনিয়ত ধোঁকা খাচ্ছি। কেননা আপেল তো লাল রঙের নয়, আপেল শুধুমাত্র লাল রঙকে শোষণ করতে পারছেনা বলেই তাকে ছেড়ে দিচ্ছে। আর আমরা তখন আপেলকে লাল রঙের দেখি।

রঙের ধরণ- রঙের কত বাহারঃ

রঙ মূলত দু’ধরণের – মৌলিক রঙ এবং যৌগিক রঙ।

মৌলিক রঙ বলতে আমরা সবাই বুঝি- লাল, সবুজ, নীল। কেউ কেউ মৌলিক রঙগুলোকে সংক্ষেপে “আসল” অর্থাৎ, আসমানী (নীল), সবুজ, লাল বলে থাকে।

তবে আপনি যদি চিত্রশিল্পীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন, তখন মৌলিক রঙ হিসেবে লাল, হলুদ এবং নীলকেই পাবেন। সেক্ষেত্রে সবুজ একটি যৌগিক রঙ। তবে সাধারণত আমরা যে স্ট্যান্ডার্ডে রঙের বিচার করি, তাতে লাল, নীল, সবুজকে মৌলিক রঙ হিসেবে বলতে পারি।





আর এই লাল, নীল, সবুজ রঙকে সমান অনুপাতে মিশিয়ে আমরা সাদা রঙ পেতে পারি। আবার এই তিনটি রঙকে বিভিন্ন অনুপাতে মিশিয়ে আমরা আলোক বর্ণালীর সবক’টি রঙই পেতে পারি।

আর এই তিনটি মৌলিক রঙ থেকে আমরা যেসব রঙ পাব, এগুলো হচ্ছে যৌগিক রঙ।



এখন চলেন আরেকটু রঙ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি আমরা। আপনি কি জানেন, মোট রঙ কয়টি? আপনার রঙের পেন্সিল বক্স খুলে দেখলে হয়তো ৬টি, ১২টি অথবা ২৪টি রঙ দেখতে পাবেন। কিন্তু আসলেই মোট কয়টি রঙ আছে? উদাহরণ হিসেবে বলি, কোন বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করলে সে লাল, নীল, কমলা, হলুদ ইত্যাদি আরও কয়েকটি রঙের নাম বলতে পারবে। আবার আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে হয়তো বেগুণী, ফিরোজা, বাদামী এই ধরণের আরও কয়েকটা রঙের নাম বলতে পারবেন। কিন্তু আমাদের চোখই প্রায় ১০ মিলিয়ন রঙকে পৃথকভাবে সনাক্ত করতে পারে। আমরা কেবল অল্প কিছু রঙের নামকরণ করেছি। এতসব রঙের নাম দেওয়া তো সম্ভব নয়। তাই বিজ্ঞানীরা প্রত্যেক রঙকে পৃথক করার জন্য তাদেরকে সংখ্যার এবং কোডের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া রঙের আরও ভেরিয়েশনের জন্য কয়েকটি কালার মডেল প্রবর্তন করেছেন। কেননা, শুধুমাত্র লাল, সবুজ, নীল রঙ (RGB Color) দিয়ে একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের বা সীমার র


যে কোষগুলো আমাদের রঙ দেখতে সাহায্য করেঃ

আলোক সংবেদী কোষ থেকে তড়িৎ-রাসায়নিক সংকেত রেটিনার দ্বিতীয় একটি আন্তঃস্নায়ুজালিকা স্তরের মধ্য হয়ে গ্যাঙলিয়ন (একধরনের স্নায়ু) কোষ দিয়ে তৈরি তৃতীয় একটি স্তরে যায়। রেটিনার এই দুইস্তর একটি সুগ্রাহী ক্ষেত্র তৈরি করে। প্রক্ষিপ্ত বিম্বে আলোকের তারতম্য পরিবর্তন (কনট্রাস্ট) বোঝার জন্য এই ক্ষেত্রটি সহায়তা করে। আলোক তারতম্য বলতে বোঝানো হচ্ছে ছবিতে থাকা বিভিন্ন বস্তুর কিনারার ধার কিংবা আলোছায়ার পরিবর্তনকে। আর গ্যাঙলিয়ন কোষের কাজ হলো এই তথ্যগুলোকে অন্যান্য তথ্যের সাথে সমন্বিত করে অপটিক স্নায়ুরজ্জুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করা।

অপটিক স্নায়ুরজ্জু এই তথ্যগুলো থ্যালামাসের মধ্য দিয়ে সেরেব্রাল কর্টেক্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সেরেব্রাল কর্টেক্সেই মূলত দৃশ্য-প্রতীতির কাজ হয়। তবে অপটিক স্নায়ুরজ্জু দৃশ্য কর্টেক্স ছাড়াও মস্তিষ্কের আদিম অংশ, ব্রেনস্টেমের কাছেও কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করে। ব্রেনস্টেমের এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রিটেকটাম নামক একদলা কোষ। এদের কাজ হচ্ছে আলোক-তীব্রতা বুঝে চোখের পিউপিলের ছিদ্র বড়-ছোট করা। যখন বাহিরের আলো বেশ তীব্র, তখন ছোট ব্যাসার্ধের ছিদ্র আর যখন বাইরের আলো মৃদু, তখন বড় ব্যাসার্ধের ছিদ্র তৈরি করাই এর কাজ। ঠিক যেন ক্যামেরার এক্সপোজার নিয়ন্ত্রনের মতো। দেখার কাজে আরো কিছু কারিগরী বিষয় আছে। কোন তুলনামুলক স্থির চিত্র দেখার জন্য আমাদের চোখ আপনা-আপনি দ্রুত নড়াচড়া করে পুরো দৃশ্যপটটি চষে যায়। সাথে সাথে এই ছবিগুলোকে জোড়া লাগিয়ে একটি মাত্র সমন্বিত ছবি তৈরি করে মস্তিষ্কে। এই কাজটা অনেকটা প্যানারোমিক ফটোগ্রাফীর অনেকগুলো ছবি জোড়া দেয়া বা স্টিচিঙের মতো। তবে একটা পার্থক্য হলো প্যানারোমিক ফটোগ্রাফীর সময় লক্ষ্য থাকে দুই চোখে চারপাশের যতটুকু কৌনিক দূরত্বের ছবি আমরা দেখি তার চাইতে বিস্তৃত কৌনিক দূরত্বের ছবি তৈরি। বিপরীতক্রমে চোখের এই দ্রুত নড়াচড়ার মাধ্যমে ছবি জোড় দেয়ার কাজের লক্ষ্য ভিন্ন। একটা দৃশ্যর মধ্য দিয়ে একপাশ থেকে অন্য দিকে তাকানোর সময় যে মসৃণ ছবি তৈরি সম্ভব হয় এই দ্রুত নড়াচাড়ার কারণে। একে বলা হয় চোখের সাক্কাড (Saccade)। চোখের সাক্কাডিয় নড়াচড়া না থাকলে আমাদের দৃশ্যপট ঘোলা হয়ে যেতো। কেউ যখন কোন ঘরের একদিক থেকে অন্যদিকে তাকাচ্ছে, তখন তার চোখের দিকে খেয়াল করলে আপনি এই সাক্কাডীয় নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
Read more ...

যেভাবে বুঝবেন আপনার থাইরয়েড রোগ আছে কি না।



থাইরয়েড আমাদের শরীরের একটি গ্রন্থির নাম।এটি থাকে আমাদের গলার স্বরযন্ত্রের দুই পাশে।দেখতে প্রজাপতির ডানার মত।আর এর রঙ টা হল বাদামী।এই গ্রন্থির কাজ হল আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমন উৎপাদন করা। যদি কোন কারনে এই গ্রন্থির হরমোন নিঃসরণে কোন প্রকার বাতিক্রম হয় তখন তাকে থাইরয়েড রোগ(সাধারনত Hypothyroidism, তবে hyperthyroidism ও goiter ও হতে পারে ) বলে।কিন্তু এ রোগটি সাধারন রোগের মত নয়।কারন এটির লক্ষনগুলো খুব ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়।কিন্তু এর ফল অনেক বেশী ক্ষতিকর।আর এই রোগ খুব ধিরে ধিরে প্রকাশ পায় বলে বেশির ভাগ রোগী তা জানেই না যে সে এই রোগটা বহন করছে।অ্যামেরিকার মত উন্নত দেশে ২৭ মিলিয়ন থাইরয়েড রোগী আছে আর তার ৫০ ভাগের বেশী লোকই তা জানে না যে তার এই রোগ আছে।যেহেতু এর ফলাফল কিছু ক্ষেত্রে খুব মারাত্মক তাই আসুন জেনে নিই কিভাবে বুঝব আমাদের থাইরয়েড রোগ আছে কি না।

লক্ষ করি,

নিচের ২ এর কম প্রশ্নের জবাব যদি হ্যাঁ হয় তাহলে আপনার থাইরয়েড ভাল আছে।
২-৪ টি প্রশ্নের জবাব যদি হা হয় তাহলে আপনার থাইরয়েড রোগ আছে কিন্তু তা কম মাত্রায়।
৪ এর অধিক প্রশ্নের জবাব যদি হা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার থাইরয়েড এর অবস্থা খুব খারাপ।
এখন নিচের প্রশ্নগুলোর সাথে আপনার জবাব মিলিয়ে নিন।

আপনার আঙ্গুলের নখগুলো কি পুরু ও ভঙ্গুর ?
ত্বক কি শুষ্ক ও চোখগুলো কি প্রায়ই জ্বালা করে ?
হাত পা কি ঠাণ্ডা?
গলার স্বর কি ভাঙ্গা?
চুল কি মোটা, চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে বা পরে যাচ্ছে?                                                                    
আই ভ্রুর বাইরের দিক কি পাতলা হয়ে যাচ্ছে?
ঘাম কি বেশী হয়?
অল্পতেই কি খুব ক্লান্ত হয়ে যান?
রজঃচক্র কি অনিয়মিত?
যৌন বাসনা কি কমে গেছে?
রজঃনিবিত্তি পরবর্তী অথবা PMS কি সাংঘাতিক ?
হাত পা কি ঘন ঘন ফুলে যায়?
রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কি ভাল না?
কোলেস্টেরল এর মাত্রা কি উচু?
কোন কিছু স্মরণ করতে বা মনঃসংযোগ করতে কি আপনার সমস্যা হয়?
আপাত কোন কারন ছারাই কি আপনার ওজন বারে অথবা কমে?
অবসাদ,খামখেয়ালীপনা, উদ্বেগ, খিটখিটে ভাব কি আছে?
পেশীর ক্লান্তি ,ব্যথা অথবা দুর্বলতা কি আছে?
বিকিরন চিকিৎসার ঘটনা আছে কি?
বিষের সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে কি?
পরিবারে আরও যেমন মা- এদের কারো কি থাইরয়েড সমস্যা আছে কি?
যদি ৪ এর অধিক প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ হয় তবে আর একদিন ও দেরি না করে আজই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়া শুরু করুন।
Read more ...

বরফ এবং সুতার ম্যাজিক।



আপনাকে একটি বরফ এবং একটি সুতা দেয়া হল। বরফটিকে সুতাটি দিয়ে ঝুলাতে হবে। কিন্তু সুতা দিয়ে বরফটিকে বাঁধতে পারবেন না। কি, ঝুলাতে পারবেন? অবাক হচ্ছেন নাকি এটা ভেবে যে এটা কি করে সম্ভব?



হ্যাঁ, এটা আসলেই সম্ভব।



তাহলে বলি কিভাবে এটা করা সম্ভব। প্রথমে যে সুতা দিয়ে বরফটিকে ঝুলাবেন, সেটিকে পানিতে ভালো করে ভিজিয়ে নিন। এবার বরফের টুকরাটিকে একটা পাত্রে নিয়ে সুতাটির এক প্রান্তকে বরফের টুকরার মাঝ বরাবর রাখি। এখন ধীরে ধীরে সুতা বরাবর বরফের উপরে লবণ ছিটাতে থাকুন। ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করার পরে দেখবেন সুতাটি বরফ কেটে ভিতরে ঢুকে যাবে এবং তারপরে বরফটি আবার সুতাসহ জমে যাবে। এখন আপনি সুতাটির অপর প্রান্ত ধরে বরফটিকে উপরে উঠালে দেখবেন বরফটি সুতার সাহায্যে ঝুলছে।



এখন ভাবছেন এটা কিভাবে হল? তাহলে চলুন, এর কারণটা জেনে নিই।



এটা তো আমরা সকলেই জানি শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পানি বরফে পরিণত হয়। এই শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে পানির ফ্রিজিং পয়েন্ট বা হিমাংক বলে। পানির এই ফ্রিজিং পয়েন্টকে চাইলে কমিয়ে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে নিয়ে আসা যায়।

উপরের ম্যাজিকটিতে ঠিক এই ধরণের ঘটনা ঘটে। বরফের উপর সুতা রেখে তার উপরে লবণ ছিটিয়ে দেয়ার ফলে পানির হিমাংক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কিছুটা কমে আসে। ফলে বরফ শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকলেও তা গলতে শুরু করে। যার ফলে সুতাটি বরফের ভিতরে ঢুকতে থাকে। যখন লবণের ক্রিয়া শেষ হয়ে যায়, তখন আবার হিমাংক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চলে আসে এবং বরফ সুতার চারপাশে জমতে শুরু করে। ফলে যখন বরফ জমাট বেঁধে যায়, তখন সুতাটিকে উপরে তুললে বরফও সুতার সাথে উপরে উঠে আসে এবং ঝুলতে থাকে।



বিজ্ঞান এক ধরণের জাদুর মত। আর বিজ্ঞানের কিছু মজার প্রজেক্ট বিজ্ঞান শিক্ষার মাঝে আনন্দ আর মজা নিয়ে আসে।
Read more ...

পেয়াইজ কাটলে চোখ দিয়ে পানি পরে কেন।



রান্না করার সময় অথবা ডিম ভাজার জন্য আপনি একটা পেঁয়াজ কাটতে গেলেন, আর তখন পেঁয়াজের ঝাঁঝের কারণে আপনার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়া শুরু করল! কি ঝামেলার ব্যাপার! কিন্তু এই পেঁয়াজ কাটার সাথে চোখ দিয়ে পানি পড়ার সম্পর্ক কোথায়? কেনই বা এমন ঘটে? মাথায় কি প্রশ্নটা আসেনা?

পেঁয়াজে সালফারযুক্ত বিভিন্ন ধরণের যৌগ থাকে, এর মধ্যে একটি হল অ্যামিনো এসিড সালফোক্সাইড (amino acid sulfoxide)। পেঁয়াজ কাটলে এর কোষের ভেতরের অ্যালিনেজ (allinase) নামক এনজাইম বের হয়ে আসে, যা amino acid sulfoxides যৌগগুলোকে উদ্বায়ী সালফোনিক এসিড (sulfenic acid) এ পরিণত করে; যা চোখের পানির সংস্পর্শে আসামাত্র syn-propanethial-S-oxide নামক যৌগ তৈরী করে, এটিই চোখে পানি আনার জন্য দায়ী। সহজ কথায়, চোখের পানির সংস্পর্শে মৃদু সালফিউরিক এসিড তৈরী হয়, তাই চোখ জ্বালাপোড়া করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, জ্বালাপোড়া এর অনুভূতি কর্ণিয়ার উপরে থাকা free nerve ending (যেখানে অনেকগুলো স্নায়ু একত্রে এসে মিলিত হয়) এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক সনাক্ত করে থাকে, তারপর সিলিয়ারি নার্ভ (cilliary nerve) দিয়ে এই অনুভূতি বাহিত হয়ে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ (parasympathetic nerves) হয়ে ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড (lacrimal gland)-কে উত্তেজিত করে। ফলে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।

এখন এ থেকে বাঁচার উপায় কি?

এই পেঁয়াজকে যদি আপনি ফ্রিজে রাখেন অথবা কাঁটার আগে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, তাহলে পেঁয়াজ কাঁটার সময় আপনার চোখ জ্বালাপোড়া করবেনা এবং এর ফলে চোখ দিয়ে পানিও পড়বেনা। কি মজা তাই না? চেষ্টা করেই দেখুন..

এর কারণ হচ্ছে পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানির সংস্পর্শ পেয়ে সালফোনিক এসিড তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। একই ঘটনা ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রেও হয়। তখন ঠাণ্ডার কারণে সালফোনিক এসিডের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। ফলে সেটি চোখের পানির সংস্পর্শে এসে syn-propanethial-S-oxide যৌগ তৈরী করতে পারেনা। এ কারণে চোখে জ্বালাপোড়াও করেনা।
Read more ...

আনারস এবং দুধ খেলে কি হয়।


 সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে আনারস এবং দুধ একসঙ্গে খাওয়া উচিত নয়। এতে শারীরিক সমস্যা হয়। বিশেষ করে মায়েরা তাদের সন্তানকে কখনই দুধ এবং আনারস খেতে দেন না। এমনকি লেবুও দুধ একসঙ্গে দেওয়া হয় না। এসব ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক বাড়িতে ও হোটেলে বিভিন্ন ফল দিয়ে যেসব ডেজার্ট তৈরি হয় তাতে মওসুমি ফল হিসেবে আনারস থাকে। একই সঙ্গে রাখা হয় দুধে তৈরি নানা উপাদেয় খাবার। দুগ্ধজাত খাবার এবং আনারস একসঙ্গে আহারে যদি অসুবিধা না হয় তাহলে দুধ ও আনারস একসঙ্গে খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের কুসংস্কার। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

Read more ...

সূর্যের কথা।




সূর্যের কথা

সূর্যটা একটা গোল আগুনের পিণ্ড, এ কথা আমরা সকলেই জানি। গোল, সেটা চোখেই দেখতে পারি—আর 'আগুন' কিনা তা একটিবার দুপুর রোদে দাঁড়ালেই আর বুঝতে দেরি লাগে না। পণ্ডিতেরা বলেন, এই পৃথিবীটার মতো তেরো লক্ষ পিণ্ডের তাল পাকালে তবে এই সূর্যের সমান বড় হয়। তাঁরা কেমন করে জানলেন? যাঁরা জরিপ করেন তাঁরা জানেন, খুব দূরের জিনিসকে নানারকমে পরখ করে এমন হিসাব পাওয়া যায় যা থেকে চট্‌ করে বলা যায় যে জিনিসটা কতখানি দূরে! এই কৌশলটি পণ্ডিতেরা সূর্যের উপর খাটিয়েছেন। পৃথিবীর দুই জায়গায় দুইজন লোক বসে সূর্যটাকে খুব সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন, কোন্‌ সময়ে সেটাকে আকাশের ঠিক কোন্‌ জায়গায় দেখা যায়—এবং দুজনের হিসাব মিলিয়ে অঙ্ক কষে বলেছেন যে সূর্যটা এখান থেকে নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল দূরে। সে যে কতদূর তা আমাদের কল্পনাতেই আসে না। একটা এঞ্জিন যদি ঘণ্টায় ৬০ মাইল করে ক্রমাগত ছুটে আজ থেকে সূর্যের দিকে রওনা হয়, সে ১৭৭ বছর পরে (২০৯৩ খৃষ্টাব্দে) সূর্যে গিয়ে পৌঁছবে। পণ্ডিতেরা এইসকল মাপ নিয়ে বলেছেন যে ঐ সূর্যের পাশে পৃথিবীটাকে বসালে সেটা দেখাবে যেন একটি তরমুজের পাশে একটি মুসুরির ডাল।

সূর্যটা কিসের তৈরি? সূর্যের আলোক পরীক্ষা করে পণ্ডিতেরা বলেন যে, পৃথিবীটা যা দিয়ে তৈরি সূর্যটাও ঠিক তাই দিয়েই তৈরি। তবে, সেইসব মাল-মসলা জমে এখানে যেমন জল মাটি পাথর হয়েছে সেখানে তা হবার যো নেই—কারণ, সেখানকার সর্বনেশে গরমে সব জিনিস সত্য সত্যই আগুন হয়ে ওঠে। লোহা শুধু গলে যায় তা নয়, ফুটন্ত জলের মতো টগ্‌বগ্‌ করে বাষ্প হয়ে উড়ে যায়। এই ফুটন্ত আগুন আর জ্বলন্ত বাষ্প সূর্যের চারিদিক ঘিরে লক্‌লক্‌ করতে থাকে। শুধু চোখে মনে হয় সূর্যটা একটি মোলায়েম গোল জিনিস, তার গায়ে কোথাও আঁচড়ের দাগটি পর্যন্ত নেই। কিন্তু আসলে তা নয়। ভাল দূরবীন দিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, তার সমস্ত গা ভরে আগুনের চিক্‌মিক্‌ খেলছে—আগুনের সমুদ্রে আগুনের ঢেউ, তার মধ্যে বড় বড় আগুনের ডেলা পাগলের মতো ডুবছে আর ভাসছে। তাছাড়া সূর্যের গায়ে প্রায়ই ছোট বড় ফোসকা দেখা যায়—ফোসকাগুলি তত উজ্জ্বল নয়, তাই দেখতে হঠাৎ কালো দেখায়। জলের মধ্যে যেমন বুদবুদ ওঠে সূর্যের গায়ে তেমনি আগুনের ফোসকা ওঠে আর ফেটে পড়ে। এক একটি বুদবুদ মাঝে মাঝে এত বড় হয় যে, কালো কাচ দিয়ে দেখলে সেগুলোকে শুধু চোখেই দেখতে পার। ঐরকম এক একটা বুদবুদের মধ্যে ইচ্ছে করলে, দু-দশটা পৃথিবীকে স্বচ্ছন্দে পুরে রাখা যায়। ঐ ফোসকাগুলি এক একটি আগুনের ঘূর্ণিচক্র, তার চারিদকে দম্‌কা আগুন ঠেলে উঠছে।

সূর্যের তেজ এত বেশি যে তার চারিদকে যে আগুনের শিখা ঝড়ের মতো উঠছে আর পড়ছে, সেগুলি আমরা দেখতেই পাই না। সূর্যের যখন পূর্ণগ্রহণ হয়, চাঁদটা মাঝে পড়ে তার চক্‌চকে শরীরটা আড়াল করে ফেলে, তখন তাদের চেহারা দেখা যায় আগুনের লক্‌লকে জিভের মতো। শিখাগুলি হাজার হাজার মাইল জুড়ে দপ্‌ দপ্‌ করে জ্বলতে থাকে, কখন আগুনের ঝাপটা দিয়ে মিনিটে ছয় হাজার মাইল ছুটে যায়, কখন শান্ত মেঘের মতো সূর্যের গায়ে ভেসে বেড়ায়। এক একটাকে দেখে মনে হয় যেন আগুনের ফোয়ারা উঠছে। তার মধ্যে যদি আমাদের এই পৃথিবীটাকে ছেড়ে দাও একটি চক্ষের নিমেষে গলে বাষ্প হয়ে কোথায় যে মিলিয়ে যাবে সে আর খুঁজেই পাবে না। সূর্যের চারিদিকের এই অগ্নিমেঘের স্তরটিকে দিনের আলোতে দেখবার জন্য পণ্ডিতেরা আশ্চর্যরকম উপায় বার করেছেন, তার জন্য তাঁদের এখন আর গ্রহণের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় না।

কিন্তু সূর্যের চারিদিকে আরে একটি জিনিস আছে যেটিকে গ্রহণ ছাড়া দেখবার যো নেই—সেটিকে সূর্যের কিরীট (Corona) বলা যায়। পৃথিবীর চারিদিকে যেমন বাতাসের আবরণ সূর্যের চারিদিকেও তেমনি বহুদূর পর্যন্ত এই কিরীটের ঢাকনি। যাঁরা সূর্যের পূর্ণগ্রহণ দেখেছেন তাঁরা বলেন, এমন আশ্চর্য অদ্ভুত দৃশ্য আর কিছু নেই। যখন গ্রহণ সম্পূর্ণ হয়ে আসতে থাকে, চাঁদের কালো ছায়া যখন চোখের সামনে পাহাড় সমুদ্র সব গ্রাস করে ফেলতে থাকে, আকাশের অদ্ভুত ফ্যাকাসে রং আর পৃথিবীর অন্ধকার দেখে, পশু পাখি পর্যন্ত ভয়ে স্তব্ধ হয়ে যায়; সেই সময়ে সূর্যের তেজ চাপা পড়ে তার আশ্চর্য কিরীটের শোভা দেখা যায়। শুধু এই কিরীটের সুন্দর স্নিগ্ধ আলো দেখবার জন্যই কত লোকে পয়সাকড়ি খরচ করে হাজার হাজার মাইল পার হয়ে গ্রহণ দেখতে যায়। এই কিরীটের চেহারা সব সময়ে এক রকমের থাকে না—কখন সেটা চারিদিকে বেশ সমানভাবে গোল হয়ে থাকে, কখন তার মধ্যে ভয়ানক ঝড় ঝাপটার লক্ষণ দেখা যায়—কখন তা থেকে লম্বা লম্বা ছটা বেরিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। মোটের উপর বলা যায়, যে সময়ে সূর্যের গায়ে ফোসকা বেশি দেখা যায় সেই সময়ে তার আগুনের শিখাগুলিরও অত্যাচার বাড়ে, আর সেই অত্যাচারে তার কিরীটটিকেও ঘাঁটিয়ে তোলপাড় করে তোলে। আমরা জানি যে পৃথিবীটা ২৪ ঘণ্টায় একবার পাক খায়, তাতেই আমাদের দিনরাত হয়। সূর্যটাকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে সেও ভয়ংকর বেগে লাট্টুর মতো ক্রমাগত পাক খাচ্ছে—কিন্তু একটি পাক খেতে তার ছাব্বিশ দিন সময় লাগে।

অনেকের বিশ্বাস এই যে, সূর্যটা এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে আছে—কিন্তু পৃথিবী গ্রহ চন্দ্র সবাই মিলে ঘুরতে ঘুরতে তার চারিদিক প্রদক্ষিণ করছে। কিন্তু আসলে তা নয়—বিশ্বজগতে কারও স্থির হয়ে বসে থাকবার হুকুম নেই। আমাদের এই পৃথিবী এবং আর সমস্ত গ্রহকে নিয়ে সূর্য ভয়ানক বেগে শূন্যে ছুটে চলেছে। সে কোন্‌দিকে কিরকম বেগে চলছে, তাও পণ্ডিতেরা হিসাব করে ঠিক করেছেন। এই হিসাবে সূর্য ঘণ্টায় প্রায় কুড়ি হাজার মাইল পথ ছুটে চলেছে।

শুনলে হঠাৎ হয়তো মনে হতে পারে, এমন সাংঘাতিক চলতে গিয়ে হয়ত কোন্‌দিন কোন্‌ তারার সঙ্গে তার ঢুঁ লেগে যাবে—কিন্তু সেরকম ভয়ের কোন কারণ নেই। এইসব তারাগুলি এক একটি এত দূরে যে সূর্যটা দশ লক্ষ বৎসর এইভাবে ছুটলেও কোন তারার কাছে পৌঁছাবার সম্ভাবনা নেই। তোমরা হিসাব করে দেখ—এক ঘণ্টায় যদি ২০০০০ মাইল যাওয়া যায় তাহলে দশ লক্ষ বৎসরে কত মাইল? ২০০০০ × ২৪ × ৩৬৫ × ১০০০০০০ । তাহলে এক একটি তারা কতখানি দূরে একবার ভাবতে চেষ্টা কর।

Read more ...

সূদন ওঝা-সুকুমার রায়।

সূদন ওঝা
সুকুমার রায়



সূদন ছিল ভারি গরীব, তার একমুঠা অন্নেরও সংস্থান নাই। রোজ জুয়া খেলে লোককে ঠকিয়ে যা পায়, তাই দিয়ে কোনরকমে তার চলে যায়। যেদিন যা উপায় করে, সেইদিনই তা খরচ করে ফেলে, একটি পয়সাও হাতে রাখে না। এইরকমে কয়েক বছর কেটে গেল; ক্রমে সূদনের জ্বালায় গ্রামের লোক অস্থির হয়ে পড়ল, পথে তাকে দেখলেই সকলে ছুটে গিয়ে ঘরে দরজা দেয়। সে এমন পাকা খেলোয়াড় যে কেউ তার সঙ্গে বাজি রেখে খেলতে চায় না।

একদিন সূদন সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু গ্রামময় ঘুরেও কাউকে দেখতে পেল না। ঘুরে ঘুরে নিরাশ হয়ে সূদন ভাবল—"শিবমন্দিরের পুরুত ঠাকুর ত মন্দিরেই থাকে—যাই, তার সঙ্গেই আজ খেলব।" এই ভেবে সূদন সেই মন্দিরে চলল। দূর থেকে সূদনকে দেখেই পুরুতঠাকুর ব্যাপার বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি মন্দিরের মধ্যে অন্ধকারে লুকিয়ে পড়ল।

মন্দিরের পুরুতকে না দেখতে পেয়ে সূদন একটু দমে গেল বটে, কিন্তু তখনই স্থির করল—'যাঃ—তবে আজ মহাদেবের সঙ্গেই খেলব।' তখন মূর্তির সামনে গিয়ে বলল—"ঠাকুর! সারাদিন ঘুরে ঘুরে এমন একজনকেও পেলাম না, যার সঙ্গে খেলি। রোজগারের আর কোন উপায়ও আমি জানি না, তাই এখন তোমার সঙ্গেই খেলব। আমি যদি হারি, তোমার মন্দিরের জন্য খুব ভাল একটি দাসী এনে দিব; আর তুমি যদি হার, তবে তুমি আমাকে একটি সুন্দরী মেয়ে দিবে—আমি তাকে বিয়ে করব।" এই বলে সূদন মন্দিরের মধ্যেই ঘুঁটি পেতে খেলতে বসে গেল। খেলার দান ন্যায়মত দুই পক্ষেই সূদন দিচ্ছে— একবার নিজের হয়ে, একবার দেবতার হয়ে খেলছে। অনেকক্ষণ খেলার পর সূদনেরই জিত হল। তখন সে বলল—"ঠাকুর! এখন ত আমি বাজি জিতেছি, এবারে পণ দাও।" পাথরের মহাদেব কোন উত্তর দিলেন না, একেবারে নির্বাক রইলেন। তা দেখে সূদনের হল রাগ। "বটে! কথার উত্তর দাও না কেমন দেখে নেব"—এই বলেই সে করল কি, মহাদেবের সম্মুখে যে দেবীমূর্তি ছিল সেটি তুলে নিয়েই উঠে দৌড়।

সূদনের স্পর্ধা দেখে মহাদেব ত একেবারে অবাক! তখনি ডেকে বললেন—"আরে, আরে, করিস কি? শীগগির দেবীকে রেখে যা। কাল ভোরবেলা যখন মন্দিরে কেউ থাকবে না, তখন আসিস, তোকে পণ দিব।" এ-কথায় সূদন দেবীকে ঠিক জায়গায় রেখে চলে গেল।

এখন হয়েছে কি, সেই রাতে একদল স্বর্গের অপ্সরা এল মন্দিরে পুজো করতে। পুজোর পর সকলে স্বর্গে ফিরে যাবার অনুমতি চাইলে, মহাদেব রম্ভা ছাড়া অন্য সকলকে যেতে বললেন, সকলেই চলে গেল, রইল শুধু রম্ভা। ক্রমে রাত্রি প্রভাত না হতেই সূদন এসে হাজির। মহাদেব রম্ভাকে পণস্বরূপ দিয়ে তাকে বিদায় দিলেন।

সূদনের আহ্লাদ দেখে কে! অপ্সরা স্ত্রীকে নিয়ে অহঙ্কারে বুক ফুলিয়ে সে বাড়ি ফিরে এল। সূদনের বাড়ি ছিল একটা ভাঙা কুঁড়ে, অপ্সরা মায়াবলে আশ্চর্য সুন্দর এক বাড়ি তৈরী করল। সেই বাড়িতে তারা পরম সুখে থাকতে লাগল। এইভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল।

সপ্তাহে একদিন, রাত্রে, অপ্সরাদের সকলকে ইন্দ্রের সভায় হাজির থাকতে হয়। সেই দিন উপস্থিত হলে, রম্ভা যখন ইন্দ্রের সভায় যেতে চাইল, তখন সূদন বললে—"আমাকে সঙ্গে না নিলে কিছুতেই যেতে দিব না।" মহা মুশকিল! ইন্দ্রের সভায় না গেলেও সর্বনাশ—দেবতাদের নাচ গান সব বন্ধ হবে—আবার সূদনও কিছুতেই ছাড়ছে না। তখন রম্ভা মায়াবলে সূদনকে একটা মালা বানিয়ে গলায় পরে নিয়ে ইন্দ্রের সভায় চলল। সভায় নিয়ে সূদনকে মানুষ করে দিলে পর, সে সভার এক কোণে লুকিয়ে বসে সব দেখতে লাগল। ক্রমে রাত্রি প্রভাত হলে, নাচগান সব থেমে গেল। রম্ভা সূদনকে আবার মালা বানিয়ে গলায় পরে চলল তার বাড়িতে। ক্রমে সূদনের বাড়ির কাছে একটা নদীর ধারে এসে রম্ভা যখন আবার তাকে মানুষ করে দিল, তখন সূদন বলল—"তুমি বাড়ি যাও, আমি এই নদীতে স্নান আহ্নিক ক'রে, পরে যাচ্ছি।"

এই নদীর ধারে ছিল ত্রিভুবন তীর্থ। এখানে দেবতারা পর্যন্ত স্নান করতে আসতেন। সেদিন সকালেও ছোটখাটো অনেক দেবতা নদীর ঘাটে স্নান করছিলেন। তাঁদের কাউকে কাউকে দেখে সূদন চিনতে পারল—তাঁরা রাত্রে ইন্দ্রের সভায় রম্ভাকে খুব খাতির করেছিলেন। সূদন ভাবল—'আমার স্ত্রীকে এরা এত সম্মান করে তাহলে আমাকে কেন করবে না?' এই ভেবে সে খুব গম্ভীর ভাবে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে দাঁড়াল—যেন সেও ভারি একজন দেবতা! কিন্তু দেবতারা তাকে দেখে অত্যন্ত অবজ্ঞা ক'রে তার দিকে ফিরেও চাইলেন না—তাঁরা তাঁদের স্নান আহ্নিকেই মন দিলেন। এ তাচ্ছিল্য সূদনের সহ্য হল না। সে করল কি, একটা গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে দেবতাদের বেদম প্রহার দিয়ে বলল—"এতবড় আস্পর্ধা! আমি রম্ভার স্বামী, আমাকে তোরা জানিস নে?" দেবতারা মার খেয়ে ভাবলেন—'কি আশ্চর্য! রম্ভা কি তবে মানুষ বিয়ে করেছে?' তাঁরা তখনই স্বর্গে গিয়ে ইন্দ্রের কাছে সব কথা বললেন।

এদিকে সূদন বাড়ি গিয়েই হাসতে হাসতে স্ত্রীর কাছে তার বাহাদুরির কথা বলল। শুনে রম্ভার ত চক্ষুস্থির! স্বামীর নির্বুদ্ধিতা দেখে লজ্জায় সে মরে গেল, আর বলল—"তুমি সর্বনাশ করেছ! এখনি আমাকে ইন্দ্রের সভায় যেতে হবে।"

দেবতারা ইন্দ্রের কাছে গিয়ে নালিশ করলে পর ইন্দ্রের যা রাগ! "এতবড় স্পর্ধা! স্বর্গের অপ্সরা হয়ে রম্ভা পৃথিবীর মানুষ বিয়ে করেছে?" ঠিক এই সময়ে রম্ভাও গিয়ে সেখানে উপস্থিত! তাকে দেখেই ইন্দ্রের রাগ শতগুণ বেড়ে উঠল। আর তিনি তৎক্ষণাৎ শাপ দিলেন, "তুমি স্বর্গের অপ্সরা হয়ে মানুষ বিয়ে করেছ, আবার তাকে লুকিয়ে এনে আমার সভায় নাচ দেখিয়েছ এবং স্পর্ধা করে সেই লোক আবার দেবতাদের গায়ে হাত তুলেছে—অতএব, আমার শাপে তুমি আজ হতে দানবী হও। বারাণসীতে বিশ্বশ্বরের যে সাতটি মন্দির আছে, সেই মন্দির চুরমার করে আবার যতদিন কেউ নূতন করে গড়িয়ে না দিবে, ততদিন তোমার শাপ দূর হবে না।"

রম্ভা তখন পৃথিবীতে এসে সূদনকে শাপের কথা জানিয়ে বলল—"আমি এখন দানবী হয়ে বারাণসী যাব। সেখানে বারাণসীর রাজকুমারীর শরীরে ঢুকব, আর লোকে বলবে রাজকুমারীকে ভূতে পেয়েছে। রাজা নিশ্চয়ই যত ওঝা কবিরাজ ডেকে চিকিৎসা করাবেন; কিন্তু আমি তাকে ছাড়ব না, তাই কেউ রাজকুমারীকে ভাল করতে পারবে না। এদিকে তুমি বারাণসী গিয়ে বলবে যে, তুমি রাজকুমারীকে আরাম করতে পার। তারপর তুমি বুদ্ধি ক'রে ভূত ঝাড়ানর চিকিৎসা আরম্ভ করলে আমি একটু একটু করে রাজকুমারীকে ছাড়তে থাকব। তারপর তুমি রাজাকে বলবে যে, তিনি বিশ্বেশ্বরের সাতটা মন্দির চূর্ণ ক'রে, আবার যদি নূতন করে গড়িয়ে দেন, তবেই রাজকুমারী সম্পূর্ণ আরাম হবেন। রাজা অবিশ্যি তাই করবেন আর তাহলেই আমার শাপ দূর হবে। তুমিও অগাধ টাকা পুরস্কার পেয়ে সুখে স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে।" এই কথা বলতে বলতেই রম্ভা হঠাৎ দানবী হয়ে, তখনই চক্ষের নিমেষে বারাণসী গিয়ে একেবারে রাজকুমারীকে আশ্রয় ক'রে বসল।

রাজকুমারী একেবারে উন্মাদ পাগল হয়ে, বিড় বিড় ক'রে বক্‌তে বক্‌তে, সেই যে ছুটে বেরুলেন, আর বাড়তে ঢুকলেনই না। তিনি শহরের কাছেই একটা গুহার মধ্যে থাকেন, আর রাস্তা দিয়ে লোকজন যারা চলে তাদের গায়ে ঢিল ছুঁড়ে মারেন! রাজা কত ওঝা বদ্যি ডাকালেন, রাজকুমারীর কোন উপকারই হল না। শেষে রাজা ঢেঁড়া পিটিয়ে দিলেন—"যে রাজকুমারীকে ভাল করতে পারবে, তাকে অর্ধেক রাজত্ব দিব—রাজকুমারীর সঙ্গে বিয়ে দিব।"

রাজবাড়ীর দরজার সামনে ঘণ্টা ঝুলান আছে, নূতন ওঝা এলেই ঘণ্টায় ঘা দেয়, আর তাকে নিয়ে গিয়ে রাজকুমারীর চিকিৎসা করান হয়। সূদন রম্ভার উপদেশমত বারাণসী গিয়ে রাজকুমারীর পাগল হওয়ার কথা শুনে ঘণ্টায় ঘা দিল। রাজা তাকে ডেকে বললেন—"ওঝার জ্বালায় অস্থির হয়েছি বাপু! তুমি যদি রাজকুমারীকে ভাল করতে না পার, তবে কিন্তু তোমার মাথাটি কাটা যাবে।" এ-কথায় সূদন রাজী হয়ে তখনই রাজকন্যার চিকিৎসা আরম্ভ করে দিল।

ভূতের ওঝারা ভড়ংটা করে খুব বেশী, সূদনও সেসব করতে কসুর করল না। ঘি, চাল, ধূপ, ধুনা দিয়ে প্রকাণ্ড যজ্ঞ আরম্ভ করে দিল, সঙ্গে সঙ্গে বিড়্‌ বিড়্‌ করে হিজিবিজি মন্ত্র পড়াও বাদ দিল না। যজ্ঞ শেষ করে সকলকে সঙ্গে নিয়ে সেই পর্বতের গুহায় চলল, যেখানে রাজকন্যা থাকে। সেখানে গিয়েও বিড়্‌ বিড়্‌ ক'রে খানিকক্ষণ মন্ত্র পড়ল—"ভূতের বাপ-ভূতের মা-ভূতের ঝি, ভূতের ছা—দূর দূর দূর, পালিয়ে যা।" ক্রমে সকলে দেখল যে, ওঝার ওষুধে একটু একটু করে কাজ দিচ্ছে। কিন্তু ভূত রাজকুমারীকে একেবারে ছাড়ল না। তিনি তখনও গুহার ভিতরেই থাকেন, কিছুতেই বাইরে আসলেন না। যা হোক, রাজা সূদনকে খুব আদর যত্ন করলেন, আর, যাতে ভূত একেবারে ছেড়ে যায়, সেরূপ ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করলেন। দুদিন পর্যন্ত সূদন আরো কত কিছু ভড়ং করল। তৃতীয় দিনে সে রাজার কাছে এসে বলল—"মহারাজ! রাজকুমারীর ভূত বড় সহজ নয়—এ হচ্ছে দৈবী ভূত। মহারাজ যদি এক অসম্ভব কাজ করতে পারেন—বিশ্বেশ্বরের সাতটা মন্দির চুরমার ক'রে, আবার নূতন ক'রে ঠিক আগের মত গড়িয়ে দিতে পারেন,—তবেই আমি রাজকন্যাকে আরাম করতে পারি।"

রাজা বললেন—"এ আর অসম্ভব কি?" রাজার হুকুমে তখনই হাজার হাজার লোক লেগে গেল। দেখতে দেখতে মন্দিরগুলি চুরমার হয়ে গেল। তারপর এক মাসের মধ্যে আবার সেই সাতটি মন্দির ঠিক যেমন ছিল তেমনটি করে নূতন মন্দির গড়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে রাজকুমারীও সেরে উঠলেন, অপ্সরাও শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে চলে গেল। তারপর খুব ঘটা ক'রে সূদনের সঙ্গে রাজকুমারীর নিয়ে হল আর রাজা বিয়ের যৌতুক দিলেন তাঁর অর্ধেক রাজত্ব।

Read more ...

ট্কার বিপদ-সুকুমার রায়।

টাকার বিপদ
সুকুমার রায়


বুড়ো মুচী রাতদিনই কাজ করছে আর গুণ্‌ গুণ্‌ গান করছে। তার মেজাজ বড় খুশি, স্বাস্থ্যও খুব ভাল। খেটে খায়; স্বচ্ছন্দে দিন চলে যায়।

তার বাড়ির ধারে এক ধনী বেনে থাকে। বিস্তর টাকা তার; মস্ত বাড়ি, অনেক চাকর-বাকর। মনে কিনতি তার সুখ নাই, স্বাস্থ্যও তার ভাল নয়। মুচীর বাড়ির সামনে দিয়ে সে রোজ যাতায়াত করে আর ভাবে, 'এ লোকটা এত গরীব হয়েও রাতদিনই আনন্দে গান করছে, আর আমার এত টাকাকড়ি, আমার একটুও আনন্দ হয় না মনে,— গাওয়া তো দূরের কথা। ইচ্ছা হলে তো টাকা দিয়ে রাজ্যের বড় বড় ওস্তাদ আনিয়ে বাড়িতে গাওয়াতে পারি— নিজেও গাইতে পারি,— কিন্তু সে ইচ্ছা হয় কই?' শেষটায় একদিন সে মনে মনে ঠিক করল যে এবার যখন মুচীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাবে তখন তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলবে।

পরদিন সকালেই সে গিয়ে মুচীকে জিজ্ঞাসা করল, "কি হে মুচী ভায়া, বড় যে ফুর্তিতে গান কর, বছরে কত রোজগার কর তুমি?"

মুচী বলল, "সত্যি বলছি মশাই, সেটা আমি কখনও হিসাব করি নি। আমার কাজেরও কোনদিন অভাব হয় নি, খাওয়া পরাও বেশ চলে যাচ্ছে। কাজেই, টাকার কোন হিসাব রাখবারও দরকার হয় নি কোনদিন।"

বেনে বলল, "আচ্ছা, প্রতিদিন কত কাজ করতে পার তুমি?"

মুচী বলল, "তারও কিছু ঠিক নেই। কখনও বেশি করি, কখনও কম করি।"

মুচীর সাদাসিধে কথাবার্তায় বেনে বড় খুশি হল, তারপর, একটা টাকার থলে নিয়ে সে মুচীকে বলল, "এই নাও হে; —তোমাকে এক একশো টাকা দিলাম। এটা রেখে দাও, বিপদ-আপদ অসুখ-বিসুখের সময় কাজে লাগবে।"

মুচীর তো ভারি আনন্দ; সে সেই টাকার থলেটা নিয়ে মাটির তলায় লুকিয়ে রেখে দিল। তার জীবনে সে কখনও একসঙ্গে এতগুলি টাকা চোখে দেখে নি।

কিন্তু, আস্তে আস্তে তার ভাবনা আরম্ভ হল। দিনের বেলা বেশ ছিল; রাত্তির হতেই তার মনে হতে লাগল, "ঐ বুঝি চোর আসছে!" বেড়ালে ম্যাও করতেই সে মনে করল, "ঐ রে! আমার টাকা নিতে এসেছে!" শেষটায় আর তার সহ্য হল না। টাকার থালিটা নিয়ে সে ছুট্টে বেনের বাড়ি গিয়ে বলল, "এই রইল তোমার টাকা! এর চেয়ে আমার গান আর ঘুম ঢের ভাল!"

Read more ...

ঠিকানা-সুকুমার রায়।

ঠিকানা
সুকুমার রায়


আরে আরে জগমোহন- এস, এস, এস-
বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেসো ?
আদ্যানাথের নাম শোননি ? খগেনকে তো চেনো ?
শ্যাম বাগ্‌চি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো ।
শ্যামের জামাই কেষ্টমোহন, তার যে বাড়ীওলা-
(কি যেন নাম ভুলে গেছি), তারই মামার শালা ;
তারই পিশের খুড়তুতো ভাই আদ্যানাথের মেশো-
লক্ষ্মী দাদা, ঠিকানা তার একটু জেনে এসো ।

ঠিকানা চাও ? বলছি শোন ; আমড়াতলার মোড়ে
তিন-মুখো তিন রাস্তা গেছে তারি একটা ধ'রে,
চলবে সিধে নাকবরাবর ডানদিকে চোখ রেখে ;
চল্‌‌তে চল্‌‌তে দেখবে শেষে রাস্তা গেছে বেঁকে ।
দেখ্‌‌বে সেথায় ডাইনে বাঁয়ে পথ গিয়েছে কত ,
তারি ভিতর ঘুরবে খানিক গোলকধাঁধার মত ।
তারপরেতে হঠাৎ বেঁকে ডাইনে মোচড় মেরে,
ফিরবে আবার বাঁয়ের দিকে তিনটে গলি ছেড়ে ।
তবেই আবার পড়বে এসে আমড়াতলার মোড়ে-
তারপরে যাও ঝেথায় খুশী- জ্বালিও নাকো মোরে ।

Read more ...

ভয় পেয়ো না-সুকুমার রায়।

ভয় পেয়ো না
সুকুমার রায়


ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না
সত্যি বলছি কুস্তি ক'রে তোমার সঙ্গে পারব না।
মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!
মাথায় আমার শিং দেখে ভাই ভয় পেয়েছ কতই না---
জানো না মোর মাথার ব্যারাম, কাউকে আমি গুঁতোই না?
এস এস গর্তে এস, বাস ক'রে যাও চারটি দিন,
আদর ক'রে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রিদিন।
হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না?
মুগুর আমার হাল্‌কা এমন মারলে তোমার লাগবে না।
অভয় দিচ্ছি শুনছ না যে? ধরব নাকি ঠ্যাং দুটা?
বসলে তোমার মুণ্ডু চেপে বুঝবে তখন কাণ্ডটা!
আমি আছি, গিন্নী আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে
সবাই মিলে কামড়ে দেব মিথ্যে অমন ভয় পেলে।

Read more ...