লেবু একটি টকজাতীয় জনপ্রিয় ফল। লেবুর ভিতর থেকে বাইরের খোসা পর্যন্ত পুরোটাই অনেক গুণে গুণান্বিত।
লেবুর রসে প্রচুর পরিমানে citric acid, calcium, magnesium, vitamin C, pectin, থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়... এছাড়া লেবু "antibacterial " , "antiviral " হিসেবেও কাজ করে... আরো বাড়তি পাওনা ইহা ওজন কমাতে সহায়ক ওজন কমাতে দুটি প্রাকৃতিক উপাদান লেবু ও মধুর পানীয় সম্পর্কে অনেকেই জানেন। ওজন কমানো ছাড়াও লেবু ও মধুর অনেক গুনাগুন আছে। কেন ওজন কমায়?
মধুতে যদিও চিনি থাকে, কিন্তু এতে ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে এটি সাধারণ চিনির মত ওজন না বাড়িয়ে ওজন কমায়। কারণ সাধারণ চিনি হজম করতে আমাদের শরীর নিজের থেকে ভিটামিন ও মিনারেল খরচ করে, ফলে এই সব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। এই সব উপাদান ফ্যাট ও cholesterol কমাতে বা ভাঙ্গতে সাহায্য করে। ফলে যখন আমরা বেশি চিনি খাই, তখন অধিক ক্যালরি শরীরে জমা ছাড়াও এইসব পুষ্টি উপাদানের চিনি হজম করতে অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। তাই ওজন বাড়াতে পারে। কিন্তু মধুতে এসব উপাদান থাকার ফলে এগুলো হজমে সহায়ক এবং ফ্যাট ও cholesterol কমায়। তাই এ পানীয় ওজন কমায়।তাছাড়া সকালে উঠেই শরীর যদি পানি জাতীয় কিছু পায়, তবে তা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে একই রকম শারীরিক পরিশ্রম করেও আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধির কারণে ওজন কমতে পারে।
সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্যের মধ্যে লেবু অন্যতম। লেবুর রয়েছে অনেক উপকারি শক্তি। জেনে নেই এর উপকারিতা গুলো-
১. লেবু আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে।
২. স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে যে, তার নাম লেবু।
৩. এটি রক্তচাপ ( ব্লাড পেসার) কমায় আর রক্তে এইচ ডি এল ( ভালো কলেস্তরল) বাড়ায়।
৪. লেবু কোলন, প্রোস্টেট এবং ব্রেস্ত ক্যান্সার প্রতিরোধে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে। কোষের উল্টাপাল্টা পরিপাকে বাধা দেয়, যেটি মূলত ক্যান্সার এর জন্যে দায়ী। এটি কোষের নাইট্রোসো এমিন প্রস্তুতিতে বাধা দেয়।
৫. সংক্রমনের বিরুদ্ধে লেবু কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এটি রক্তের শ্বেতকনিকা বৃদ্ধি করে যা জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়া এন্টিবডি উৎপাদনে সহায়তা করে। ৬. সামান্য গরম পানিতে একটু লেবুর রস, কি যে উপকারি!!! পরিপাক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে আর লিভারকে রাখে সতেজ। গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় কার্যকর।
৭. লেবুর খোসা শুকিয়ে গুড়ো করে রাখতে পারেন। আর ব্যবহার করতে পারেন গোসল করার সময়। শরীরকে করবে ঠাণ্ডা , আর আরাম অনুভব করবেন ব্যাপক। এছাড়া এ গুড়ো মাথাব্যথা দূর করবে।
৮. ব্রণে লেবুর রস দিলে ব্রণ দূরীভূত হবে আর নতুন ব্রণ উঠতে বাধা প্রধান করবে।
৯. লেবু হচ্ছে প্রাকৃতিক ত্বক পরিস্কারকারি । এটি ত্বক কালো হওয়ার জন্যে দায়ী মেলানিন কমায় এবং মেলানিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই আপনার ত্বক থাকবে সজীব আর উজ্জ্বল।
১০. সাধারন ঠাণ্ডা প্রতিরোধে এটি অনেক কার্যকর।
১১. মূত্রনালির প্রদাহ এবং গনেরিয়া প্রতিরোধে লেবুর শক্তি অনেক।
১২. কিছু কিছু পোকামাকড়ের কামরের ব্যাথা ও বিষ মুক্ত করতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।
১৩. সামুদ্রিক খাবার ও মাংসে জীবাণু দূর করতে লেবুর রস ব্যবহার করা হয়।
১৪. যারা মোটা তারা প্রতিদিন সকালে লেবুর রসের সাথে একটু লবণ মিশিয়ে খেয়েই দেখুন না !!! এটি আপনার কলেস্তরল লেভেল এবং ওজোন দুটোই কমিয়ে ফেলবে।
১৫. ডায়রিয়া হলে লেবুর শরবত ডি- হাইদ্রেশান রোধ করে।
১৬. এক চামচ ঘন লেবুর রস প্রতিদিন খেলে এজমা দূর হয়ে যাবে।
রক্তচাপ এবং দুশ্চিন্তা কমায় : লেবু পানি শরীরে এক ধরনের প্রশান্তির সৃষ্টি করে। ফলে এটা আপনাকে দুশ্চিন্তা, হতাশা থেকে মুক্ত রাখে। লেবু শুধু শরীরে সজীবতা আনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও লেবু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
আপেল তাজা রাখতে : কাটা আপেল বা অ্যাভোকাডোকে বাদামি রং হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে লেবু। এজন্য কাটা অংশটিতে লেবু মাখিয়ে রাখতে পারেন।
লিভার সুস্থ রাখে এবং হজমে সাহায্য করে : লেবুর পানি লিভারে থাকা পরিপাক সংক্রান্ত এনজাইমগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে খাবার সহজে হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য ও হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে লেবুর উপকারিতা অনস্বীকার্য। লেবু রক্তের অক্সিজেন পরিবহনের মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : ওজন নিয়ন্ত্রণে লেবুর উপকারিতা অনেক। সকালে উঠে কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট ধ্বংস হয়। নিয়মিত এ পানীয় খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক : গবেষণায় পাওয়া গেছে লেবুর ভেতরে এমন অনেক উপাদান আছে যা শরীরে টিউমার তৈরি হতে বাধা দেয়। ক্যান্সার প্রতিরোধে লেবুর উপকারিতা সীমাহীন।
ত্বকের দাগ দূর করতে : ত্বকের যত্নেও লেবুর খোসা অতুলনীয়। লেবুর খোসায় অল্প মধু নিয়ে পুরো মুখে ভালো করে ঘষে নিন। হাত ও পায়েও ঘষে নিতে পারেন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ মুক্ত হবে।
দাঁত সাদা করে : এক টুকরো লেবুর খোসা নিয়ে এর ভেতরের অংশ দিয়ে ২ মিনিট দাঁত ঘষুন। এরপর কুলি করে ফেলুন। তাৎক্ষণিক ফলাফল দেখতে পাবেন।
******স্বাস্থ্যরক্ষার পাশাপাশি লেবু ও লেবুর খোসার বেশ কয়েকটি অসাধারণ ব্যবহারও রয়েছে*******
মশা তাড়াতে কার্যকর : শুনতে আজব লাগলেও মশা তাড়াতে বেশ কার্যকর লেবু। এজন্য লেবুকে দুইভাগ করে কেটে নিয়ে কাটা অংশে লবঙ্গ গেঁথে নিতে হবে। তারপর ঘরের একটি স্থানে রেখে দিন। মশার উপদ্রব থেকে দূরে থাকুন।
পিঁপড়া দূর করতে : কয়েক টুকরা লেবুর খোসা জানালার কোণে, দরজার কোনে, বিশেষ করে যেখান দিয়ে পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকা মাকড় আসে সেদিকে রেখে দিন। দেখবেন পিঁপড়া তেমন একটা আসছে না। কারণ পিঁপড়া এবং অন্যান্য পোকামাকড় লেবুর গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না।
ঘর ও ফ্রিজের পরিবেশ সতেজ রাখতে : রোজমেরি এবং ভ্যানিলার সঙ্গে লেবু মিশিয়ে সহজেই ঘরের পরিবেশকে সতেজ করে তুলতে পারেন। ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে একটি বা দুটি লেবুর খোসা রেখে দিন। দেখবেন ফ্রিজের ভেতরে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।
সিরামিকের থালাবাসন চকচকে করতে : লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক এসিড আছে যা থালাবাসন চকচকে করতে সাহায্য করে। থালা বাসন পরিষ্কার করার সময় ডিশ ওয়াশারের সাথে লেবুর খোসা দিয়ে থালাবাসন ঘষুন। এটি আপনার থালাবাসনের দাগ দূর করে নতুনের মত করে তুলবে। এমনকি আপনি কাঁচের গ্লাস ও প্লেটও এভাবে পরিষ্কার করতে পারেন।
কাপড় থেকে ঘামের দাগ দূর করতে : অনেক সময় জামা কাপড়ে ঘামের দাগ পড়ে যায়। এই দাগ উঠাতে একটি অর্ধেক রস বের করে নেয়া লেবু ঘষে নিন। এরপর দাগের উপর বেকিং সোডা ছিটিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ঘামের দাগ একেবারে উধাও হয়ে যাবে।
No comments :
Post a Comment