মহাবিশ্বের শুরুটা কী রকম হওয়া উচিৎ ছিল সে সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে আমদের এমন কোন তত্ত্বকে প্রমাণ সত্য হিসেবে আঁকড়ে ধরতে হবে যা সৃষ্টির শুরুতে, কালের শুরুতেও সঠিক ছিল। ব্যাপারটা কল্পনা করা কঠিন। মহাবিশ্বের সৃষ্টি কর্মের জন্য কোন প্রত্যক্ষদর্শী নেই। আর সে জন্যই আমাদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সাহায্য নিতে হবে। এসব ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো নির্ভুল হতে পারেনা। কারণ সে কিছু ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ করে রায় দেয়। পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতা তার নেই। আর সে জন্যই এসব তত্ত্বের থাকে অনেক বড় বড় সীমাবদ্ধতা। মহাবিশ্বের উৎপত্তি অনেকটা সেই প্রাচীন প্রশ্নের মত……
- প্রথমে কি হয়েছিলো? ডিম নাকি বাচ্চা?
- কেউ কি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিল?
- যদি কেউ এ কাজটি করে থাকে তবে তাকে কে সৃষ্টি করেছিল?
- যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিল তার অস্তিত্ব চিরদিনই কি ছিল?
- তাকে কি সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয়নি?
আধুনিক কাল পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের প্রবণতা ছিল এ ধরনের প্রশ্নকে সযত্নে এড়িয়ে যাওয়ার। তারা ভাবতেন এসব মোটেও বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নয়। তারা এগুলোকে Meta Physics অথবা ধর্মের বলে আলাদা করে রাখতেন। এ প্রসঙ্গে আমরা বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক অ্যয়ারিস্টটলের নাম বিশেষভাবে আলোচনায় নিতে পারি। মহাবিশ্বের যে একটা শুরু ছিল এ কথা তিনি আদৌ পছন্দ করতেন না। তিনি এবং তাঁর মতো আরও অনেক প্রাচীন বিজ্ঞানীর তাহলে তা হবে ঐশ্বরিক ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করা। তাঁরা বিশ্বাস করতেন মহাবিশ্বের অস্তিত্ব চিরকাল রয়েছে এবং থাকবে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এ ধারণা বদলাতে থাকে। বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী Stephen Hawking তার A Brief History দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
স্টিফেন হকিং ও রজার পেনরোজ বলেন, কালের শুরুতে মহাবিশ্ব ছিল একটি বিন্দু, যে বিন্দুতে ঘনত্ব ছিল অসীম এবং স্থান, কালের বক্রতাও ছিল অসীম। অর্থাৎ স্থান-কাল-ঘনত্ব-সময় সব একই বিন্দুতে ছিল। স্থান কেলের একটি সীমা থাকবে এবং বিগ ব্যাং এর ফলে তার উৎপত্তি।
পরবর্তীতে স্টিফেন হকিং এটি এভাবেও ব্যাখ্যা করেন, Big Bang এর একেবারে শুরুতেই মহাবিশ্বের আয়তন ছিল প্রায় শূন্য (শূন্যের কাছাকাছি) আর উত্তাপ ছিল অসীম। বিস্ফোরণের পরমুহূর্ত হতে এর সম্প্রসারণ ও তাপমাত্রা বিকিরণ শুরু হয়। ফলে মহাবিশ্বের আয়তন বৃ্দ্ধি পেতে থাকে।
এই প্রাথমিক অবস্থা নিয়ে Friedman একটি তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন যা পরবর্তীতে Friedman Model নামে পরিচিতি পায়। তত্ত্বটির মূলকথা ছিল, মহাবিশ্বের আকার দিগুণ হলে এর তাপমাত্রা অর্ধেক হবে। এ প্রসঙ্গে ম্যাসাচুসেটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী অ্যালান গুথ বলেন, এক সেকেন্ডের সামান্য মাত্র ভগ্নাংশ কালের ভিতরে মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০ (একের পিঠে ত্রিশটি শূন্য)গুণ বেড়েছে। গুথের প্রস্তাবনা অনুসারে Big Bang-এর পর মহাবিশ্বের শুরু অত্যন্ত উত্তপ্ত কিন্তু বিশৃঙ্খল অবস্থায়। বিস্ফোরণের এক সেকেন্ড পর তাপমাত্রা নেমে এসেছিল প্রায় ১০০০ কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। এ তাপমাত্রা সূর্য্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রার চেয়ে প্রায় ১০০০ গুণ বেশী। হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণের সময় অতিক্ষুদ্র সময়ের জন্য এটি তৈ্রি করা যায়। বৃহৎ বিস্ফোরণের প্রায় একশ সেকেন্ড পর তাপমাত্রা একশ কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে নেমে আসে। সবচেয়ে উত্তপ্ত তারকাগুলির অভ্যন্তরে এই তাপমাত্রা পাওয়া যায়।
বিজ্ঞান ব্যাপারটি এমন নয় যে স্টিফেন হকিং ও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা একটা তত্ত্ব দাঁড় করালেন আর আমরা চোখ কান বুঝে তা মেনে নিলাম। বিজ্ঞানীরা বলেন, যেখানে যা কিছুই ঘটুক না কেন, তার একটি কারণ থাকতে বাধ্য। কোথাও কোন কিছু অকারণে ঘটে না। নিউটন দেখলেন, পাকা ফলটি গাছ তেকে মাটিতে পড়ছে। কেন পড়ছে? এর কারণ কি? তখন পর্যন্ত কেউই জানত না। নিউটন শুধু জানতেন কোন ঘটনাই অকারণে ঘটেনা। তাই ফল পড়ার ঘটনাটির একটি কারণ থাকতে বাধ্য। তিনি সেয় কারণটির অনুসন্ধান শুরু করলেন আর সেশ পর্যন্ত আবিষ্কার করলেন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির। নিয়টন যদি ভাবতেন, ঘটনাটি এমনি এমনি হয়েছে, তাহলে নিশ্চই বিজ্ঞানের অতবড় আবিষ্কারটি হতো না। এই হলো বিজ্ঞানের মূলকথা।
১৯২৯ সালে এডুইন হাব্ল আবিষ্কার করেন যে, দূরবর্তী ছায়াপথের অপসারণ বেগ দূরত্বের সমানুপাতিক। এটিই হাবল্’স ল’ নামে পরিচিত। এর ভৌত তাৎপর্য এই যে, বিশ্ব ব্যাপক পটভূমিতে প্রসারমান। বর্তমানে যেহেতু বিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে সেহেতু সুদূর অতীতে নিশ্চই ছায়াপথের মধ্যে দুরত্ব ছিল শূন্য। অর্থাৎ সে সময় বিশ্বের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা ছিল অসীম। এ ধরণের বিন্দুকে বলে ব্যতিক্রমী বিন্দু বা Singularity সেই ব্যতিক্রমী বিন্দুর এক প্রচন্ড বিস্ফোরণে বর্তমান বিশ্বের সৃষ্টি। উপরের কথাগুলো কি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে মহাবিশ্ব কেন প্রসারমান?
বিস্ফোরণের অবশেষ এখনো পাওয়া যায়। এটি মাইক্রোতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ বা Micro wave Background Radiation এবং এর তাপমাত্রা ২.৭ কেলভিন বা -৪৫৪.৮১ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা -২৭০.৪৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
(এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)
যে বিন্দুর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের উৎপত্তি তার যে একটি আস্তিত্ব ছিল তা এভাবেও বলা যায়। ধরি মহাবিশ্বে গতিশীল ছায়াপথগুলোর তথা ক্রম-প্রসারমান মহাবিশ্বের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হল। এ চলচ্চিত্রে দেখা যাবে, ছায়াপথগলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যদি এর ফিল্মটিকে উল্টোদিকে চালিয়ে দেয়া হয় তবে কি দেখা যাবে? একজন সাঁতারু স্প্রিং বোর্ড থেকে লাফ দিয়ে সুইমিং পুলে পড়ছে এ দৃশ্যের চলচ্চিত্র ধারণ করে যদি ফ্লিম উল্টো দিকে চালানো হয় তবে পর্দায় দেখা যাবে যে, মানুষটি সুইমিং পুল থেকে উল্টোভাবে বেরিয়ে এসে স্প্রিং বোর্ড-এর উপর সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কল্পিত মহাজাগতিক চলচ্চিত্রটি উল্টা দিকে চালালে দেখা যাবে ছায়াপথগুলো পরস্পরের দিকে দ্রুতবেগে ধাবমান আর সেই বিন্দুর অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে।
এখন আমরা ২’টি প্রশ্নে আসতে পারি…
1. মহাবিশ্ব কেন একটা?
2. আমরা যেমন দেখছি মহাবিশ্ব সে রকম হল কেন?
দ্বিতীয়টির উত্তর Stephen Hawking এভাবে দিয়েছেন- “মহাবিশ্ব অন্যরকম হলে আমরা এখানে থাকতে পারতাম না”। সে সূত্রে প্রথমটির উত্তর এমন হতে পারে, মহাবিশ্ব একাধিক হওয়া সম্ভব ছিলনা বলেই একটি। উত্তরগলো হয়তো হালকা, কিন্তু একথা তো সত্যি যে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান এত কম যে, এ ধরণের উত্তর দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এমন আরও অনেক প্রশ্ন আছে যেখানে এ ধরণের উত্তরও আমরা দিতে পারিনা…
- মহাবিশ্বের সৃষ্টি কথায়?
- বিগ ব্যাং-এর আগে কি হয়েছিল?
- বিগ ব্যাং কেন হয়েছিল?
- শুরুতে মহাবিশ্ব এত উত্তপ্ত কেন ছিল?
মানুষ যা কখনও ভাবেনি, তাই সম্ভব করেছে। মানুষ কখনও ভাবেনি সে উড়তে পারবে, সে চাঁদের মাটিতে পা রাখতে পারবে, অথচ বাস্তবে তা-ই সম্ভব হয়েছে। আমরা হয়তো মুদ্রার একপিঠই দেখেছি, অন্যপিঠ কখনো দেখিনি। তাই আমরা হয়তো এখনও চূড়ান্ত সত্যকে জানিনা। একদিন নিশ্চই জানতে পারব। অবসান হবে বহু প্রতিক্ষার। [চলবে...]
গত পর্বে আমরা বিগব্যাং নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা এ নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো। সাথে বোনাস হিসেবে থাকবে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বিগব্যাং নিয়ে একটি ভূলের বিস্তারিত!
বিগ ব্যাং নিয়ে প্রচলিত ধারণা:
বিগব্যাং। বিখ্যাত একটি তত্ত্ব। বিজ্ঞানে সর্বাধিক উচ্চারিত শব্দগুলোর একটি। শুধু তাই না, পৃথিবীর সবচাইতে ভুল ভাবে বোঝা বিষয়গুলোরও একটি হলো বিগব্যাং। বিগব্যাং সম্পর্কে আমরা সাধারণ মানুষ হয়তো নাম শুনেই যথাযথ সম্মান জানিয়ে দুরে থাকি। কিংবা, এমন কিছু আবছা ধারনা রাখি যা আসলে ভুল, মহাভুল।
আমারা যেই মহাবিশ্বে বাস করি তার কিভাবে উৎপত্তি হলো? মহাবিশ্বের সৃষ্টির আগে কি ছিল? এই প্রশ্ন মানুষ অনেক আগে থেকেই করে আসছে। পাঠক, আপনি কি মনে করেন যে বিগব্যাং তত্ত্ব এই প্রশ্নের উত্তর দেয়? যদি এরকমটাই ভেবে থাকেন তাহলে এখনই এ ধারণাটা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে দিন! আসলে এই মহাবিখ্যাত তত্ত্বটির মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। এই তত্ত্ব আরো যে সব চিরায়ত, অবাক করা প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে না সেগুলো হলো:
=> কি, কিংবা কোন শক্তি মহাবিশ্বের উৎপত্তির সূচনা করেছিলো? বিগব্যাং নয়, ইনফ্লুশন থিউরী এর একটি ব্যাখ্যা দেয়।( এ নিয়ে বিস্তারিত পরে আলোচনা করা হবে)
=> বিগব্যাং’র আগে কি ঘটেছিলো?
=> মহাবিশ্বের বাইরে কি আছে?
=> মহাবিশ্বের আকৃতি কেমন? এ বিষয়টি অনেক তত্ত্বই ব্যাখ্যা করে। কিন্তু বিগব্যাং তত্ত্ব এ সম্পর্কে কিছু বলে না।
=> বিগব্যাং’র আগে কি ঘটেছিলো?
=> মহাবিশ্বের বাইরে কি আছে?
=> মহাবিশ্বের আকৃতি কেমন? এ বিষয়টি অনেক তত্ত্বই ব্যাখ্যা করে। কিন্তু বিগব্যাং তত্ত্ব এ সম্পর্কে কিছু বলে না।
আসলে বিগব্যাং তত্ত্ব হলো একটি ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যার বিষয় – কিভাবে আমাদের নিজস্ব মহাবিশ্ব অত্যন্ত ক্ষুদ্র, ঘন ও উত্তপ্ত অবস্থা হতে আজকের এই দশায় গড়ে উঠলো। বিগব্যাং তত্ত্বই কেবল একমাত্র ব্যাখ্যা নয়, আরো ব্যাখ্যা আছে। এদের মধ্যে বিগব্যাং তত্ত্বই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। কারণ বিগব্যাং তত্ত্ব এমন কিছু ভবিষদ্বানী করেছিলো যা এখন প্রমাণিত। তবে বিগব্যাং এখনও অনেক পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা দিতে পারে না।
বিগব্যাং কি কোন বিষ্ফোরণ?
না। বিগব্যাং কোন বিষ্ফোরণ নয়। অনেকে এভাবে ভাবেন যে বিগব্যাং এক আদি সময়ে মহাবিশ্বের সকল বস্তু আর শক্তি এক বিন্দুতে সংকুচিত ছিল। তার পর এ বিন্দু বিষ্ফোরিত হয়ে বস্তুগুলো চারপাশের স্থানে ছিটকে যায়। এর মাধ্যমে মহাবিশ্ব গড়ে ওঠা শুরু করে।
বিষয়টা আসলে তা নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিগব্যাং নিয়ে যে কোন আলোচনার সময় আমাদের যে শব্দটির দিকে সবচাইতে খেয়াল করতে হবে তা হলো সম্প্রসারণ, বিষ্ফোরণ নয়। এ তত্ত্ব বলে স্থান তার মাঝে যা আছে তার সব কিছু নিয়েই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সকল বস্তু এই স্থানের মধ্যে ছিল – তারা একে অপর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
এ দুটি ধারণার মাঝে পার্থক্য কোথায়? বিগব্যাং মহাবিশ্বের পদার্থ এবং শক্তি চারপাশের স্থানে ছিটকে পড়ে নি। বরং স্থান, তার মাঝে পদার্থ ও শক্তি নিয়ে প্রসারিত হয়েছে। যদিও বিগব্যাং তত্ত্বের কিছু বিবৃতি (রূপ/ভার্সন) বলে যে বিগব্যাং অত্যন্ত দ্রুতগতির সম্প্রসারণ – তারপরেও তা সাধারণ ধারণামতে কিন্তু ঠিক বিষ্ফোরণ নয়। নিচের ছবিটা লক্ষ্য করুন-
আজ যখন আমরা মহাকাশের দিকে তাকাই, দেখি বিভিন্ন গ্রহ, অজস্র তারা, গ্যালাক্সি এবং তাদের মাঝে বিস্তীর্ণ স্থান। এই বিস্তীর্ণ স্থান দিয়ে তারা আলাদা আলাদা ভাবে আছে। বিগব্যাং আদি মুহূর্তে সকল বস্তু, শক্তি আর স্থান এক শুণ্য আয়তনের কিন্তু অসীম ঘনত্ববিশিষ্ট এক বিন্দুতে সীমাবদ্ধ ছিল। বিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে বলেন সিঙ্গুলারিটি।
যত দোষ নামের:
এই যে বিগব্যাং তত্ত্ব নিয়ে ভুল ধারণা – এর জন্য আমরা কাকে দোষ দিতে পারি? আসলে দোষ দেওয়া উচিত এই তত্ত্বের নামটিকেই। বিগব্যাং’র শাব্দিক অর্থ হলো বিশাল গন্ডগোল! আর এ নামের এমন মহিমা হলো যে শুনলেই মনে হয় ব্যাপক বিষ্ফোরণ! এই নামটি দিয়েছিলেন স্যার ফ্রেড হয়েল। তিনি মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে স্থির একটি মহাবিশ্বের নকশা দিয়েছিলেন। এ নকশায় সময়ের যে কোন বিন্দুতে মহাবিশ্ব একই রকম থাকে (আইনস্টাইনও প্রথমে স্থির মহাবিশ্বের মডেলে বিশ্বাস করতেন)। স্বাভাবিকভাবেই বিগব্যাং হলো এই ধারণার উল্টো। তিনি ১৯৪৯ সালে বিবিসি প্রচারিত থার্ড প্রোগ্রাম নামক অনুষ্ঠানে নতুন এই তত্ত্বকে একটু হেয় করতেই বিগব্যাং নামটি দেন। পরবর্তীতে তিনি অনেকগুলো বক্তৃতায় এ নামটি ব্যবহার করেন এবং এ নামটিই পরবরর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
এই যে বিগব্যাং তত্ত্ব নিয়ে ভুল ধারণা – এর জন্য আমরা কাকে দোষ দিতে পারি? আসলে দোষ দেওয়া উচিত এই তত্ত্বের নামটিকেই। বিগব্যাং’র শাব্দিক অর্থ হলো বিশাল গন্ডগোল! আর এ নামের এমন মহিমা হলো যে শুনলেই মনে হয় ব্যাপক বিষ্ফোরণ! এই নামটি দিয়েছিলেন স্যার ফ্রেড হয়েল। তিনি মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে স্থির একটি মহাবিশ্বের নকশা দিয়েছিলেন। এ নকশায় সময়ের যে কোন বিন্দুতে মহাবিশ্ব একই রকম থাকে (আইনস্টাইনও প্রথমে স্থির মহাবিশ্বের মডেলে বিশ্বাস করতেন)। স্বাভাবিকভাবেই বিগব্যাং হলো এই ধারণার উল্টো। তিনি ১৯৪৯ সালে বিবিসি প্রচারিত থার্ড প্রোগ্রাম নামক অনুষ্ঠানে নতুন এই তত্ত্বকে একটু হেয় করতেই বিগব্যাং নামটি দেন। পরবর্তীতে তিনি অনেকগুলো বক্তৃতায় এ নামটি ব্যবহার করেন এবং এ নামটিই পরবরর্তীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
গণিত পরীক্ষার চালাকি!
স্কুলের সেই চতুর ছেলের গল্প বলি। গণিত পরীক্ষা চলছে। ভালোভাবেই দিচ্ছিলো পরীক্ষাটা। হঠাৎ একটা অঙ্ক সে মেলাতে পারছিলো না – কোথায় যেন একটা ঝামেলা হচ্ছে।অঙ্কটা তার অপরিচিত নয়। উত্তরটা ছিলো জানা। সে এখন একটা ছোট্ট চালাকি করতে পারে। অঙ্কটার শেষে কোনমতে বসিয়ে দিতে পারে সঠিক উত্তরচি। আশা করা যায়, পরীক্ষকের চোখে চালাকিটা ধরা পড়বে না।
অনেকটা কাছাকাছি কাজ করেছিলেন আইনস্টাইন। বিগব্যাঙ নিয়ে করেছিলেন একটি ভুল। চলুন সেই গল্প শোনা যাক।
স্কুলের সেই চতুর ছেলের গল্প বলি। গণিত পরীক্ষা চলছে। ভালোভাবেই দিচ্ছিলো পরীক্ষাটা। হঠাৎ একটা অঙ্ক সে মেলাতে পারছিলো না – কোথায় যেন একটা ঝামেলা হচ্ছে।অঙ্কটা তার অপরিচিত নয়। উত্তরটা ছিলো জানা। সে এখন একটা ছোট্ট চালাকি করতে পারে। অঙ্কটার শেষে কোনমতে বসিয়ে দিতে পারে সঠিক উত্তরচি। আশা করা যায়, পরীক্ষকের চোখে চালাকিটা ধরা পড়বে না।
অনেকটা কাছাকাছি কাজ করেছিলেন আইনস্টাইন। বিগব্যাঙ নিয়ে করেছিলেন একটি ভুল। চলুন সেই গল্প শোনা যাক।
আইনস্টাইনের ভুল!!!
বিজ্ঞানী হাবল বিগব্যাং একটি তাত্ত্বিক রূপ দেন (গত পর্বে এ নিয়ে বলা হয়েছে)। তার সমসাময়িক অনেকেই এই তত্ত্ব নিয়ে বিশাল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন। তাদের মাঝে একজন ছিলেন আইনস্টাইন।
আইনস্টাইন ভাবতেন, মহাবিশ্ব স্থির। অর্থাৎ সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব যেমন ছিলো, এখনোও ঠিক তেমনই আছে। আর বিগব্যাং তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
আইনস্টাইনের বিখ্যাত একটি তত্ত্ব সাধারণ আপেক্ষিকতা। তিনি আশা করতেন, এই তত্ত্ব তাকে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে। এই তত্ত্বটি সম্পূর্ণ করার পর তিনি বিশ্মিত হয়ে গেলেন। এই তত্ত্ব বলছিলো, মহাবিশ্ব স্থির নয়। হয় তা সম্প্রসারিত অথবা সংকুচিত হচ্ছে। এই গাণিতিক উপসংহার ছিলো তার স্হির মহাবিশ্ব ধারণার সাথে বিরোধপূর্ণ। প্রথমে এই উপসংহার তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তাই এই বিরোধিতা নিরসনের জন্য তিনি একটি সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবক (কসমোলজিকাল কন্সট্যান্ট) প্রস্তাব করেন। এই ধ্রুবক গাণিতিকভাবে তার তত্ত্ব আসে না। অনেকটা জোড় করেই এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে যুক্ত করা হয়। এর ফলে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে স্হির মহাবিশ্ব মডেলের বিরোধ মিটে যায়।
অবশ্য পরবর্তীতে যখন হাবলের তত্ত্ব স্বীকৃত হলো, আইনস্টাইন মেনে নিলেন যে তিনি ভুল করেছেন। মহাবিশ্ব আসলেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার নিজের তত্ত্বই বিগব্যাং’র পক্ষে যায়। তিনি যে সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবকের প্রস্তাবনা করেছিলেন, তা আসলে ভুল ছিলো।
বিজ্ঞানী হাবল বিগব্যাং একটি তাত্ত্বিক রূপ দেন (গত পর্বে এ নিয়ে বলা হয়েছে)। তার সমসাময়িক অনেকেই এই তত্ত্ব নিয়ে বিশাল দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়েন। তাদের মাঝে একজন ছিলেন আইনস্টাইন।
আইনস্টাইন ভাবতেন, মহাবিশ্ব স্থির। অর্থাৎ সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব যেমন ছিলো, এখনোও ঠিক তেমনই আছে। আর বিগব্যাং তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে।
আইনস্টাইনের বিখ্যাত একটি তত্ত্ব সাধারণ আপেক্ষিকতা। তিনি আশা করতেন, এই তত্ত্ব তাকে মহাবিশ্বের গঠন সম্পর্কে একটি ধারণা দেবে। এই তত্ত্বটি সম্পূর্ণ করার পর তিনি বিশ্মিত হয়ে গেলেন। এই তত্ত্ব বলছিলো, মহাবিশ্ব স্থির নয়। হয় তা সম্প্রসারিত অথবা সংকুচিত হচ্ছে। এই গাণিতিক উপসংহার ছিলো তার স্হির মহাবিশ্ব ধারণার সাথে বিরোধপূর্ণ। প্রথমে এই উপসংহার তিনি মেনে নিতে পারেন নি। তাই এই বিরোধিতা নিরসনের জন্য তিনি একটি সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবক (কসমোলজিকাল কন্সট্যান্ট) প্রস্তাব করেন। এই ধ্রুবক গাণিতিকভাবে তার তত্ত্ব আসে না। অনেকটা জোড় করেই এই ধ্রুবকটিকে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে যুক্ত করা হয়। এর ফলে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের সাথে স্হির মহাবিশ্ব মডেলের বিরোধ মিটে যায়।
অবশ্য পরবর্তীতে যখন হাবলের তত্ত্ব স্বীকৃত হলো, আইনস্টাইন মেনে নিলেন যে তিনি ভুল করেছেন। মহাবিশ্ব আসলেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। তার নিজের তত্ত্বই বিগব্যাং’র পক্ষে যায়। তিনি যে সৃষ্টিতাত্ত্বিক ধ্রুবকের প্রস্তাবনা করেছিলেন, তা আসলে ভুল ছিলো।
মহাবিশ্বের বিকাশ ব্যাখ্যা করার জন্য বিগব্যাং তত্ত্বই একমাত্র নয়। আরো অনেকগুলো মডেল মহাবিশ্বের বিকাশ ব্যাখ্যা করে। তবে তাদের কোনটিই বিগব্যাং তত্ত্বের মতো জনপ্রিয় ও বহুলপ্রচারিত নয়। এরকম কয়েকটি মডেলের নাম শোনা যাক:
ক) স্টেডি স্টেট ইউনিভার্স। এই তত্ত্ব বলে যে মহাবিশ্বের ঘনত্ব অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে একই রকম থাকে। সম্প্রসারণের সাথে সাথে ব সমানুপাতিক হারে মহাবিশ্ নতুন বস্তু তৈরি করে। এ কারণে মহাবিশ্বের ঘনত্বের কোন পরিবর্তন হয় না।
খ) বিগ বাউন্স তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব ধারাবাহিকভাবে সম্পসারিত হয়। তার পর একসময় সে সংকুচিত হওয়া শুরু করে। তারপর আবার সে সম্পসারিত হয়। আমাদের মহাবিশ্ব এইরকম সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অনেকগুলো মহাবিশ্বের একটি।
গ) একপাইরোটিক তত্ত্ব বলে আরো একটি মডেল আছে। এই তত্ত্বটি বলে যে আমাদের মহাবিশ্ব চতুর্থ মাত্রায় দুইটি ত্রিমাত্রিক জগতের পারস্পারিক সংঘর্ষের ফলাফল! এই তত্ত্ব বিগব্যাং’র সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। একটা সময় পর মহাবিশ্ব বিগব্যাং প্রদর্শিত পথে বিকশিত হয়।
খ) বিগ বাউন্স তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব ধারাবাহিকভাবে সম্পসারিত হয়। তার পর একসময় সে সংকুচিত হওয়া শুরু করে। তারপর আবার সে সম্পসারিত হয়। আমাদের মহাবিশ্ব এইরকম সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অনেকগুলো মহাবিশ্বের একটি।
গ) একপাইরোটিক তত্ত্ব বলে আরো একটি মডেল আছে। এই তত্ত্বটি বলে যে আমাদের মহাবিশ্ব চতুর্থ মাত্রায় দুইটি ত্রিমাত্রিক জগতের পারস্পারিক সংঘর্ষের ফলাফল! এই তত্ত্ব বিগব্যাং’র সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। একটা সময় পর মহাবিশ্ব বিগব্যাং প্রদর্শিত পথে বিকশিত হয়।
No comments :
Post a Comment