একটা মেয়েকে একটা ছেলে অশালীন কাপড় পরার জন্য ধর্ষণ করেছে নাকি করে নাই –এটা আমার কাছে খুবই অস্বস্তিকর একটা “shallow” আলোচনা মনে হয়েছে। যদি বলা হয়, অশালীন পোষাকই দায়ী, তাহলে ধর্ষক কিছুটা জাস্টিফিকেশন পেয়ে যায়। আবার যদি বলা হয়, “অশালীন পোষাক দায়ী নয়”, সেক্ষেত্রেও মনে হওয়ার কথা, “মানুষ কি ধ্বজ নাকি?”। মানুষের মধ্যে পশুবৃত্তি আছে বলে সে ধর্ষণ করে- এই উত্তরটাকে আমার কাছে যথার্থ এবং যথেষ্ট মনে হয় না, খুবই ভাসাভাসা কথা, কথাটার মাঝে চিন্তাভাবনার অভাব আছে। যদি তাই হত, তাহলে এই একুশ শতকে হঠাৎ করে পুরো বিশ্বে পশুর সংখ্যা বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে কোন কারণ ছাড়া কেন বেড়ে গেল- এটা বোঝা বড়ই দায়। বিবর্তনবাদী নাস্তিকরা অবশ্য ব্যাপারটা কে অন্যভাবে দেখছে। তারা বলে মানুষ হল অন্য পশুর মতই পশু, যার বিবর্তনটা একটু বেশি হয়েছে, এই। “ধর্ষন একটা ন্যাচারাল ব্যাপার”- এই কথাটা সর্বপ্রথম প্রচার করে বিবর্তনবাদীরা, যেটা আসলে ধর্ষককে চুপেসারে একধরণের ধর্ষণের লাইসেন্সই দেয় ! মন বলে তো কিছু নেই, সবই DNA এর খেলা ! DNA তে নাকি ধর্ষণের জিন ছিল, ধর্ষকের কি করা ! ২। আচ্ছা আমরা কি চিন্তা করেছি মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য কি ? অবশ্যই এটা লেজ নয়, পার্থক্যটা হল মানুষ চিন্তা(thinking) করতে পারে, তার মন(mind) আছে, পশু চিন্তা করতে পারে না, কারণ তার মন নাই। আর মিলটা হল, মানুষ এবং পশু উভয়ের কিছু প্রবৃত্তি(instinct) আছে, যেমন- survival instinct, procreation বা sexual instinct) ইত্যাদি। যদিও সব মানুষের ইন্সটিংট গুলো এক, তবু কেন মানুষ একই পরিবেশে ভিন্ন আচরণ করে? এর কারণ হল, ঐ প্রবৃত্তির উপর তার দৃষ্টিভঙ্গি, যেটা আসে চিন্তা(thought) থেকে উৎসরিত কোন কনসেপ্ট বা জীবনদর্শন থেকে। যেমন পশ্চিমা সমাজ মানুষের সেক্সুয়াল ইন্সটিংটকে দেখে এক্সক্লুসিভলি সেক্সুয়াল লেন্স থেকে, তাই তার ফোকাসিং পয়েন্ট হল সেক্স। আবার ইসলাম পুরো ব্যাপারটাকে দেখে প্রজাতি রক্ষা এবং মানসিক প্রশান্তির লেন্স থেকে, তাই তার ফোকাসিং পয়েন্ট হল বিয়ে। এজন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে যত প্রকার সেক্স থাকা সম্ভব তার সবই বিদ্যমান, মুসলিমদের মধ্যে এতটা নয়। সেক্সুয়াল ইন্সটিংট স্যাটিসফ্যাকশন খুজবে তখনই যখন তাকে বাহ্যিকভাবে উত্তেজিত (external stimulation) করা হয়, তা না হলে নয়। স্যাটিসফ্যাকশন না হলে একটা মানুষ অস্বস্তি এবং টেনশন বোধ করবে, মারা যাবে না, তবে স্যাটিসফাই করার পথ খুজতে থাকবে। পশ্চিমা সমাজে আমরা দেখি এই ধরণের যৌনতা উদ্দীপক জিনিষের ব্যাপক ছড়াছড়ি। সেটা রাস্তার বিলবোর্ড থেকে শুরু করে লাস ভেগাসের বিচ পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের গল্পে-কবিতা-সাহিত্য-মুভিতে অবাধ যৌনতার বিশাল সমারোহ। যেমন একনের একটা গান আছে। “I wanna fuck you”। তার আরেকটা গান আছে, “I had just sex”. আর শিলার যৌবন তো আছেই ! আছে স্পার্টাকাস। ৩। নারী পুরুষের মধ্যকার সম্পর্কটা তাই আমাদের সমাজে অনেক হালকা হয়ে গেছে। যেমন ধরেন, আমরা ছেলেরা আসলে মেয়েদেরকে কিভাবে দেখি ? একটা সুন্দর মেয়ে দেখলে আমরা বলি, “দেখ দেখ ! সেরম একটা মাল”। একটা মেয়েকে আমরা দেখি আর হিসেব করতে থাকি সে কি ৩৬-২৪-৩৬ ? আমরা দেখি পর্ণোগ্রাফি, দেখি আর নিজেদের সেখানে কল্পনা করি, যেখানে মেয়েদের কাজ শুধুই “সুখ” দেওয়া। সে এক মজার জিনিষ, নারী হল সেখানে “ভোগ্যপণ্য”। আমরা দেখি শরীরসর্বস্ব সারিকা আর শখদেরকে, বিএমডব্লিউ এর বিজ্ঞাপন দেখে আমরা আবিষ্কার করি মেয়েরা হল “বিপনণপণ্য”, তাদেরকে কয়টা টাকা দিলেই তারা শরীর দেখায়। রাতের বেলা আমরা ফ্যাশন চ্যানেলগুলো দেখি, আর আমাদের মন অজান্তেই বুঝে ফেলে, মেয়ে মানেই শরীর, সেক্স আর সেক্স। পপ গানের জঘন্য মিউজিক ভিডিওগুলোতে শরীরের ঢলাঢলি দেখে আমরা জানতে পারি, নারী হল “সেক্স সিম্বল”। বাস্তব জগতে আমরা আমাদের পাশের বাসার মেয়েটিকে দেখি তার আকর্ষনীয় দেহটাকে ফোকাস করে ঘুরে বেড়া্তে। আচ্ছা, সে চায়টা কি ? আমি দেখব আর সে দেখাতে চায়, তাই তো ! নাকি আবার অন্য কিছু আছে এটার মধ্যে! আমরা দেখি, আর সবাইকে ডেকে দেখাই, সেও খুশি হয়, তাই না? আর আমাদেরকে তো কে যেন শিখিয়েই দিয়েছে, “চুমকী চলেছে একা পথে”, তার সঙ্গী হতে চাওয়াটা মোটেও দোষের কিছু না। নকশা আমাদেরকে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করিয়ে দেয় ঠিক কতটুকু চিপা জিন্স হলে একটা মেয়েকে সবচেয়ে যৌনাবেদনময়ী দেখাবে। তারা আমাদেরকে শিখিয়ে দেয় ওড়না পরে নিজের শরীর ঢেকে রাখার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ, সে বিশ্বাস করে, “নারী, মূল্য তোমার শরীরে, মূল্য তোমার শরীরের কুঞ্চনে !” মম আর বিন্দুদের দিকে তাকিয়ে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারে জনৈক বুদ্ধিজীবি বলেন, “তোমার মধ্যে যৌবনের ভারি অভাব”, আর মেয়েটি তাতে মন খারাপ করে নিজেকে আরও যৌবনা হয়ে পুরূষের চোখে সুশোভিত হয়ে ধরা দিতে চায়। কটা মেয়েকে বিচার করা হয় তার শরীর
No comments :
Post a Comment